চয়নিকা চৌধুরী: বর্তমানে মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবির তালিকা দিন দিন বেড়েই চলছে। কোনোভাবে থামানো যাচ্ছে না এ মাদক কারবার। ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে যুব সমাজ। তরুণ ও যুব সমাজ ব্যাপকহারে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে।
বর্তমান সমাজে মাদক জন্ম দিচ্ছে একের পর এক অপরাধ। শুধু মাদকের কারনে ছেলের হাতে বাবা মা খুন, স্ত্রী হাতে স্বামী খুন, স্বামীর হাতে স্ত্রী, প্রেমিকের হাতে প্রেমিকা ইত্যাদি খবর পত্র পত্রিকায় পাওয়া যায়।
আমাদের দেশে মাদক এখন সহজলভ্য হয়ে পড়েছে। বলা যায়, আশির দশেকের শেষ দিকে ফেনসিডিলের আর্বিভাব হয়। পর্যায়ক্রমে এর ব্যাপক বিস্তার ঘটে। নব্বই দশকে মাদকের জগতে সংযোজন হয় ইয়াবা। এ ছাড়া গাঁজা, আফিম, গুল,মদ,বিয়ার,হেরোইন,কোকেন,চোলাইমদসহ রকমারি মাদকের প্রতি তরুনদের আসক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সমাজসেবা অধিদফতরের এক গবেষণায় দেখা যায় শহর, গ্রাম থেকে নিয়ে স্কুল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মাদকাসক্ত হচ্ছে। প্রতিনিয়ত তারা নেশার আড্ডায় মেতে থাকছে। অনেকে নেশার টাকা জোগাড় করতে নেমে পড়ছে অপরাধ জগতে। একটা তরুন অপরাধ জগতে পা বাড়ানোর প্রথম সিঁড়ি হচ্ছে মাদকদ্রব্য। সিগারেট হলো মাদকাসিক্তর মূল কারন। একটা যুবক প্রথমেই যে নেশায় আসক্ত হয় সেটা হলো সিগারেট। আর এই নেশা থেকে আস্তে আস্তে মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়ে।এই মাদক তরতাজা তরুনদের মেধা,বিবেক,লেখাপড়া, মনুষত্ব্য সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে। বিনষ্ট করে দিচ্ছে স্নেহ,মায়া,ভালোবাসা, পারিবারিক সুবন্ধন। মাদকাসক্ত সন্তানের হাতে অহরহ বাবা মা, ঘনিষ্ট স্বজন নির্মম হত্যার শিকার হচ্ছে।
বর্তমানে জানা যায়, দেশে প্রায় ৬০লাখ মাদক সেবী রয়েছে। মাদকসেবীদের শতকরা ৯১ ভাগই কিশোর ও তরুণ।
মাদকাসক্তির কারণে সামাজিক মূল্যবোধের ও অবক্ষয় হয়।দারিদ্রতা,বেকারত্ব,ব্যাক্তিগত সমস্যা,পারিবারিক ও সামাজিক দ্বন্ধ, অস্তিরতা এইগুলাও মাদকাসক্তির কারন হয়ে থাকে।
প্রতিটা দেশের তরুন ও যুবসমাজ সে দেশের সম্পদ। যুব সমাজ ধ্বংস হলে পুরো দেশ ও জাতি ধ্বংস। মাদকের হাত থেকে তরুনদের রক্ষা করা সমাজের দায়িত্ব। সমাজে আমাদের মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করতে হবে। মাদক সেবনের কুফল গুলা তরুনদের সামনে তুলে ধরতে হবে। সামাজিক ও পারিবারিক ভাবে সচেতন হতে হবে। মাদকের হাত থেকে মুক্ত করতে হবে দেশের যুব সমাজকে। মাদক শুধু ব্যাক্তির শারীরিক অবস্থার অবনতি করে না, এটি সমাজের সংস্কৃতি, মূল্যবোধ ও সভ্যতাকে ও অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেয়।
তাই আমাদের উচিত মাদকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা, সমাজে সবার মাঝে একটাই স্লোগান পৌঁছে দেওয়া “মাদক কে না বলুন” এর মধ্য দিয়ে আমাদের যুব সমাজকে মাদকের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। না হলে মাদকের ভয়াল থাবায় আমাদের যুব সমাজ পুরোপুরিভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে।