নিউজ ডেস্ক: ব্রয়লার মুরগি ২৩৫ টাকা কেজি হলে খাই কী? বাঁচি কী করে? আগে গরুর মাংস নিতাম কয়েক মাস পর পর। সেটাও বাদ দিয়েছি। আজ মুরগি কিনতে এসে দেখি দাম বেড়ে গেছে। গত সপ্তাহেও তো এই দাম ছিল না। কথাগুলো বলছিলেন বাজারের এক ক্রেতা। বললেন, সবকিছুর দাম বেশি হওয়ায় ব্রয়লার কিনে বাসায় মাংসের চাহিদা মেটাতাম। কিন্তু এখন এখানেও দেখছি করুণ অবস্থা। কিছুই বুঝছি না। এই ক্রেতা মো. রবিউল ইসলামের চোখেমুখে বিরক্তির ছাপ। বললেন, প্রশ্ন করে কী করবেন? দাম কমবে? রবিউল ইসলাম মুরগি কিনছিলেন চিকেন কর্ণার নামের এক খুচরা দোকানে।
দোকানের মালিক মোসলেম উদ্দিনের কাছে জানতে চাওয়া হলো- আজ কেন এই দাম? বললেন, সমস্যায় পড়েছি আমরা।
আমাদের কাছে সাধারণ ক্রেতারা এসে দরদাম করছে। নানান কৈফিয়ত চাইছে। আমরাও উত্তর দিতে দিতে ক্লান্ত। যেখান থেকে পাইকারি কিনি তারাও সঠিক ব্যাখ্যা দিতে চাইছেন না। বলছেন, মুরগির বাচ্চার দাম বেশি, বাচ্চার খাদ্যপণ্যের দামও বেশি। তাই মুরগির দামও বাড়ছে। বললেন, যে ব্রয়লার গত সপ্তাহে বিক্রি করেছি ১৯০ টাকায় তা আজ ২৩৫ টাকা। দাম বেড়েছে সোনালী মুরগিরও। এ মাসের শুরুতে যে দামে বিক্রি করেছি এখন তার থেকে ৪০/৫০ টাকা বেশি। কথাগুলো বলেই তিনি তার ফর্দ বের করে দিলেন। বললেন, নিজেই দেখুন কী অবস্থাটা হচ্ছে।
আরেক দোকানি হাসান। বললেন, শুক্রবার এলে আমার ছোট এই দোকানে মুরগি বিক্রি করতাম আড়াইশ’ থেকে তিনশ’ পিস। কিন্তু এমাসে শুক্রবারে একশ’ পিসও বিক্রি করতে পারছি না। ক্রেতা কমে গেছে। আমাদের এখানে সাধারণত নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তরা আসতো। তারাও কেনা কমিয়ে দিয়েছে।
হাসানের ভাষায়, পাইকাররাও জবাব দিতে চান না। সরাসরি বলে বসেন- আমরা কী করবো? দোকানি হাসান আরও জানালেন, আমার কিছু ক্রেতা ছিল। যারা প্রতি শুক্রবারে পাঁচ-ছয় কেজি করে পরিবারের জন্য মুরগি কিনে রাখতেন। এখন তারা দু’ থেকে তিন কেজি নেন। কঠিন অবস্থা।
কথা হচ্ছিল পাশের মুরগি বিক্রেতার সঙ্গে। তিনি মুরগির পাশাপাশি গরুর মাংসও বিক্রি করেন। আজ শুক্রবার তিনি ৭২০ টাকা কেজি মাংস বিক্রি করছেন। গত সপ্তাহে বিক্রি করেছেন ৬৮০ টাকা করে। বললেন, আমরা গাবতলি থেকে গরু কিনি। সেখানে বেশি দাম। আমরা কম রাখি কী করে!
কিন্তু হঠাৎ কেন আজ একলাফে ৭২০ টাকা হলো? বিক্রেতা উত্তর দিলেন না। সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলেন আমেনা বেগম। হাতে ৫০০ টাকার নোট। এই প্রতিবেদক তাকে অনেকক্ষণ ধরেই দেখছিলেন। আমেনা জানালেন, পাঁচশ টাকা নিয়ে আসছি। এরা বলছে ৭২০ টাকা কেজি। বলে আরও নাকি বাড়বে, রমজান মাস তো আসেইনি। হাফ কেজি মাংস দিয়ে ক’জন খাবো। আরও বাজার তো আছেই। কাঁচা বাজারে ঢুকিনি এখনো। এইভাবে বাঁচা কঠিন। সবাই অসহায় হয়ে পড়েছি।
আমেনা বেগমের কথা শুনে দোকানি ক্ষোভ নিয়ে বললেন, আপনাদের খাওয়া লাগবে না। যাদের টাকা আছে তারা খেলেই চলবে। নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তের কথা ভাবছে কে? মিরপুর ১০, মিরপুর-১, ২-এর মুরগির খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এর আগে কখনোই এমন দাম বাড়েনি এভাবে।