নিউজ ডেস্ক: একদিকে চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতির চাকা শ্লথ হয়ে আসছে। স্বাভাবিকভাবে শ্রমবাজারেও তার প্রভাব পড়ছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) এক প্রতিবেদনে শ্রমবাজারের বিষণ্ন চিত্র উঠে এসেছে।
বলা হয়েছে, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির কারণে বিশ্বের অনেক দেশে প্রকৃত মজুরি হ্রাস পাচ্ছে। মনে রাখা দরকার, প্রকৃত মজুরি হ্রাসের বাস্তবতা তৈরি হয়েছে কোভিড-১৯-এর ধাক্কার পর। ফলে বিষয়টি বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের জন্য দ্বৈত ধাক্কা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এতে যে সবচেয়ে নিম্ন আয়ের মানুষেরা আক্রান্ত হয়েছেন, তা বলাই বাহুল্য।
এই বাস্তবতায় নতুন কর্মসংস্থানের হার কমবে এবং বৈশ্বিক কর্মসংস্থানের গতি হ্রাস পাবে। চলতি বছরের শেষ প্রান্তিকে বৈশ্বিক কর্মসংস্থানের অনেকটাই কমে আসবে বলে জানিয়েছে আইএলও।
দ্য আইএলও মনিটর অন দ্য ওয়ার্ল্ড অব ওয়ার্কে বলা হয়েছে, শ্রমবাজারের এই পরিস্থিতির কারণে যেমন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে না, তেমনি কাজের মানেও তার প্রভাব পড়ছে। একই সঙ্গে শ্রমবাজারের অসমতা বৃদ্ধি পাবে। ফলে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে যে বিভাজন বাড়ছে, তা আরও বাড়বে বলে ধারণা করছে আইএলও।
২০২২ সালের শুরুতে বৈশ্বিক মোট শ্রম সময় অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছিল। বিশেষ করে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কাজে ও নারীদের মধ্যে, যদিও এর চালিকা শক্তি ছিল অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত। ফলে গত ১৫ বছরে যে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ ঘটেছিল, তা অনেকটাই মার খায়। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর গত প্রায় এক বছরে মোট শ্রম সময় কমেছে ১ দশমিক ৫ শতাংশ। আর পূর্ণকালীন কাজ কমেছে প্রায় চার কোটি।
উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে ব্যবধান আরও বাড়ছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ৭৫ শতাংশ উন্নত দেশে দেখা গেছে, ২০২২ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে জনসংখ্যা-কর্মসংস্থানের অনুপাত প্রাক্-কোভিড পর্যায়ে ফেরত গেছে বা ক্ষেত্রবিশেষে তাকে ছাড়িয়েও গেছে। কর্ম সময়ের পাশাপাশি উন্নত দেশগুলোতে কর্মসংস্থান পুনরুদ্ধারের হার ২০২২ সালের প্রথম প্রান্তিকে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল। কিন্তু পরবর্তী প্রান্তিকে তা একেবারেই গতি হারায়।
তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই আইএলও বলেছিল, ২০২০ সালে মহামারি শুরুর সময়ের তুলনায় পৃথিবী অনেকটা ঘুরে দাঁড়ালেও ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২২ সালেও পিছিয়ে থাকবে অর্থনীতি। আর তাতে কর্মঘণ্টা কমবে। ২০২২ সালের বৈশ্বিক কর্ম সময় ২০১৯ সালের তুলনায় ২ শতাংশ কম থাকবে।
যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের শ্রমবাজারে কী প্রভাব পড়বে, তা-ও নিরূপণ করেছে আইএলও। বলা হয়েছে, ২০২২ সালে ইউক্রেনের কর্মসংস্থানের হার আগের বছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ কমবে। তবে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর আইএলও আরও ভয়ানক পূর্বাভাস দিয়েছিল। তারা তখন বলেছিল, ২০২২ সালে ইউক্রেনের ৪৮ লাখ মানুষ কাজ হারাতে পারে। মূলত রুশ বাহিনীর কাছ থেকে বিভিন্ন অধিকৃত এলাকা পুনরুদ্ধার ও বিরোধপূর্ণ অঞ্চল হ্রাসের কারণে এমনটি ঘটেছে। তবে এই পুনরুদ্ধার দীর্ঘস্থায়ী হবে না, তার প্রকৃতি হবে ভঙ্গুর।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শ্রমবাজারের এই পতন ঠেকাতে সারা বিশ্বে সামাজিক সংলাপ প্রয়োজন। এটা শুধু মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বা তার প্রভাব ঠেকানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, বরং কর্মসংস্থান, উদ্যোগ, দারিদ্র্য—এসব বিষয়েও নজর দিতে হবে বলে প্রতিবেদনে মত প্রকাশ করা হয়েছে।