নিউজ বিজ্ঞপ্তি: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী, তাঁর আজীবনের আন্দোলন, সংগ্রাম ও ত্যাগ-তিতীক্ষার অকুন্ঠ সমর্থক ও প্রেরণাদায়ী মহিয়সী নারী বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব-এঁর ৯১তম জন্মবার্ষিকী পালন করা হলো। বাংলাদেশ দূতাবাস, প্যারিস বিনম্র শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় মহিয়সী এই নারীর জন্মবার্ষিকী উদযাপন করেছে।
দূতাবাসের সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন ও অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয় এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদ ও ১৫ আগষ্টের ভয়াল কাল রাতে শহীদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যসহ শহীদ সকলের রুহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। এরপর, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব- এঁর ৯১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়।
দূতাবাসে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে কোভিড-১৯ অতিমারীর প্রেক্ষিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দূতাবাসের সকল সদস্য এ আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানটি একইসাথে ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হওয়ায় রাজনৈতিক সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ প্রবাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও গুণীজন অনলাইনে অংশগ্রহন করেন।
আলোচনা পর্বে বক্তাগণ বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের প্রথম হতেই বঙ্গমাতার অবদান অপরিসীম। তিনি প্রতিটি ক্ষেত্রে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে মনোবল যুগিয়েছেন, অনুপ্রেরণা প্রদান করেছেন। বঙ্গবন্ধুর কারাবরণের সময়ে তিনি একদিকে যেমন নিজের সংসার, সন্তানদের সামলেছেন ঠিক একইভাবে আওয়ামী লীগের হাল ধরেছেন। তাঁর অসামান্য ত্যাগের ফলেই শেখ মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গবন্ধু থেকে জাতির জনক পেয়েছে বাঙালি জাতি। এই মহিয়সী নারীর জন্মবার্ষিকী ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত জাতীয় দিবস হিসেবে পালনের সরকারের সিদ্ধান্তকে তারা খুবই সময়োপযোগী বলে উল্লেখ করেছেন। বঙ্গমাতার অবদান প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে জাতিকে অনুপ্রেরণা যোগাবে -এ আশাবাদ তাঁরা ব্যক্ত করেন।
রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এ ছাড়া তিনি ১৫ আগষ্টের ভয়াল কাল রাতে শহীদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সকলের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন। রাষ্ট্রদূত বলেন, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিবকে স্নেহময়ী, মমতাময়ী মা উল্লেখ করে বলেন তিনি ছিলেন চিরায়ত বাঙ্গালি নারীর আদর্শ প্রতিকৃতি। তিনি আরও বলেন, বঙ্গমাতা কেবল জাতির পিতার সহধর্মিনীই ছিলেন না, তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত সঙ্গী, বাঙ্গলির মুক্তি সংগ্রামের সহযোদ্ধা। মহীয়সী এ নারী জাতির পিতার রাজনৈতিক দর্শন ও আদর্শকে বাস্তবায়ন করতে আজীবন বঙ্গবন্ধুকে সাহস যুগিয়েছেন ও পাশে থেকে সর্বাত্বক সহযোগিতা করে গেছেন। রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, বঙ্গমাতা ছিলেন কোমল হৃদয়ের দৃঢ়চেতা নারী, যিনি কোন বিপদেই ধৈর্য হারা হননি। সীমাহীন ধৈর্য, বিচক্ষণতা ও সাহসের সাথে তিনি সকল পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন। তিনি ব্যক্তিগত সংকটকে উপেক্ষা করে ছাত্রলীগকে সহায়তা করেছেন।
রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামে বঙ্গমাতার অবদান অপরিসীম। তাঁর ত্যাগ, প্রজ্ঞা, মানবিকতার কারণে এ মহীয়সী নারী বাংলাদেশের ইতিহাসে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তিনি বঙ্গমাতার জীবন, কর্ম ও ত্যাগ বাঙালি নারী জাতি তথা সমগ্র বাঙালি জাতির জন্য অনুকরণীয় বলে মন্তব্য করেন। সরকার বঙ্গমাতার আদর্শকে চিরস্থায়ী করতে এ দিনটিকে জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং একইসাথে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ৫ জন বিশিষ্ট নারীকে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা পদক প্রদান করেছে। প্রশ্নাতীতভাবে এটি একটি যুগান্তিকারী উদ্যোগ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব-এঁর জীবন ও কর্মের ওপর মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।