1. ph.jayed@gmail.com : akothadesk42 :
  2. admin@amaderkatha24.com : kamader42 :
রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৫ অপরাহ্ন

বঙ্গবন্ধুর চিন্তা ও মননে ছিল নারীর সমঅধিকার: স্পিকার

আমাদের কথা ডেস্ক
  • আপডেট : বুধবার, ২৪ মার্চ, ২০২১

নিউজ ডেস্ক: নারী-পুরুষের সমঅধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার সব পরিকল্পনা হাতে নিয়েই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নবগঠিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ভিত্তি রচনা করেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

মঙ্গলবার জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ১০ দিনের আয়োজনের সপ্তম দিন নির্ধারিত বিষয়ের ওপর আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি।

স্পিকার বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার সার্বিক পরিকল্পনা, গৃহিত কার্যক্রম ও তার বাস্তবায়নের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত রয়েছে বাংলাদেশের নারীর সমঅধিকার ও ক্ষমতায়ন।

“বঙ্গবন্ধু কেবল নারীর সমঅধিকার ও সমতায় যে বিশ্বাসই করতেন তা নয়, বরং তার চিন্তা ও মননের গভীরে উপলব্ধি করতেন নারীর সমান অধিকার নিশ্চিতকরণ ছাড়া সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। তাই নারীর সমান অধিকার, সমমর্যাদা, সাম্য এবং স্বাধীনতাকে তিনি প্রতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন।”

১৯৭২ সালের সংবিধানের ২৮ অনুচ্ছেদ বিশ্লেষণ করে স্পিকার বলেন, ধর্ম, গোষ্ঠী, জাতি, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদে কারও প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করবে না। এটি একটি মৌলিক অধিকার হিসেবে সংবিধানে সন্নিবেশিত। রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী পুরুষ সমান অধিকার পাবে।

সংবিধানের ২৮(২) অনুচ্ছেদে নারীর ক্ষমতায়নের ‘শক্ত ভীত’ রচিত হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ‘সুগভীর প্রজ্ঞা ও দুরদর্শীতার কারণে’ রাষ্ট্র ও গণজীবনের কোনো ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য করার সুযোগ থাকেনি।

বাহাত্তরের সংবিধানের প্রসঙ্গ টেনে স্পিকার বলেন, ১৯৭২ এর সংবিধানে নারীদের জন্য ১৫টি সংরক্ষিত আসন দিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল। বিশ্বের অনেক দেশেই আজ পর্যন্ত এই ধরনের বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি।

“এরই ধারাবাহিকতায় একাদশ জাতীয় সংসদে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন নারী, বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ একজন নারী, সংসদের উপনেতা বেগম সাজেদা চৌধুরী একজন নারী এবং জাতীয় সংসদের স্পিকার একজন নারী। রয়েছেন সংরক্ষিত ৫০ জন নারী সদস্য এবং ২৩ জন সরাসরি ভোটে নির্বাচিত নারী সদস্য। সমগ্র বিশ্বে এটি একটি অনন্য উদাহরণ।”

শিরীন শারমিন বলেন, “জাতির পিতা বিশ্বাস করতেন, দেশকে এগিয়ে নিতে হলে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক প্রতিটি ক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারীর সমান অধিকার ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ, বঙ্গবন্ধু সামগ্রিক নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করতেন। পরিবার সমাজ ও জাতীয় ক্ষেত্রে কোথাও বঙ্গবন্ধু নারী-পুরুষের পৃথক মর্যাদার জায়গা রাখেননি।”

রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুকে উদ্ধৃত করে স্পিকার বলেন, “নারীদেরও পুরুষদের মত সমান অধিকার রয়েছে এবং তা রাজনীতির ক্ষেত্রেও। আওয়ামী লীগ যেমন অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করে, তেমনি নর-নারীর সমান অধিকারেও বিশ্বাস করে। আওয়ামী লীগকে নারী নেতৃত্ব গড়ে তুলতে হবে।

“১৯৬৭ সালে বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা ছিল বঙ্গবন্ধুর এক অনন্য অবদান। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মূলধারার রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে মহিলা আওয়ামী লীগ।”

স্বাধীনতা যুদে্ধ পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে নির্যাতিত নারীদের আশ্রয় ও পুনর্বাসনের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ব্যাপক কার্যক্রম নিয়েছিলেন, তা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন স্পিকার।

“যখন এইসব নারীদের যথাযথ সম্মান দেখাতে সমাজ ব্যর্থ হয়, তখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, তাদের পিতার জায়গায় শেখ মুজিবুর রহমান লিখতে হবে এবং তাদের ঠিকানা হবে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর। নির্যাতিত নারীদের পুনর্বাসনের জন্য ১৯৭২ সালেই বঙ্গবন্ধু গঠন করেন নারী পুনর্বাসন বোর্ড। নির্যাতিতদের তালিকা তৈরি করে ওই বোর্ড।

“১৯৭২ সালে পাবনার বেড়া উপজেলার বসন্তীপুর গ্রামে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। সেখানে যুদ্ধে নির্যাতিত ২০/২৫ জন নারী বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করে জীবনের মর্মান্তিক ঘটনার কথা তুলে ধরেন। তখন অশ্রু সজল হয়ে পড়েন বঙ্গবন্ধু। আবেগে তার কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসে।

“সেদিন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আজ থেকে পাক বাহিনীর নির্যাতনে মহিলারা সাধারণ মহিলা নয়, তোমরা বীরাঙ্গনা। তোমরা আমাদের মা’।”

বঙ্গবন্ধুর মত তার স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবও যে বীরাঙ্গনাদের বিয়ের ব্যবস্থা নিয়েছিলেন, সে কথাও স্পিকার বলেন।

সরকারের প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, সেখানে ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের পুনর্বাসনে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। গ্রামীণ নারীদের কৃষি কাজে উদ্বুদ্ধ করার জন্য সাভারে ৩৩ বিঘা জমির ওপর চালু করা হয় কৃষিকাজ নির্ভর কর্মসূচি। বঙ্গবন্ধু নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিতের ওপরেই অধিক গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, নারীর নিজস্ব আয় পরিবারে তাদের সম্মান বৃদ্ধি করে।

“নারীকে তার স্থান দিতে হবে এমন উপলব্ধির কথা বঙ্গবন্ধু বার বার প্রকাশ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শনের গভীরে নারী-পুরুষের সমতা ও সাম্যের সত্য প্রতিথ রয়েছে, তারই প্রমাণ দেয়।”

বঙ্গবন্ধুর লেখা গ্রন্থ ‘আমার দেখা নয়াচীন’ থেকে উদ্ধৃত করে স্পিকার বলেন, “বিয়েতে যৌতুক প্রথা কখনও কাম্য নয়। যে ছেলে এভাবে অর্থ চাইবে, তাকে কোনো মেয়ের বিবাহ করা উচিত না।”

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষ্যে ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ১০ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার সপ্তম দিনের অনুষ্ঠান সাজানো হয় ‘নারীমুক্তি, সাম্য ও স্বাধীনতা’ থিম সামনে রেখে।

অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী। অনুষ্ঠানের শুরুতে তিনি বলেন, মানবের মুক্তির জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। সেই সংগ্রামের পথপরিক্রমায় নারী মুক্তি ছিল তার অন্যতম লক্ষ্য। বঙ্গন্ধু বলেছেন দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীদের পেছনে ফেলে রেখে দেশ এগিয়ে যেতে পারেনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে আলোচনা পর্বে জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থার (ইউনেস্কো) মহাপরিচালক অড্রে অ্যাজুলাই এর ভিডিও বক্তব্য প্রচার করা হয়। ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ এবং জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ভাল্টার স্টাইনমায়ারের শুভেচ্ছা বার্তা পড়ে শোনান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

অষ্টম দিনের প্রতিপাদ্য ‘শান্তি, মুক্তি ও মানবতার অগ্রদূত’

দশ দিনের অনুষ্ঠানমালার অষ্টম দিন বুধবারের প্রতিপাদ্য ‘শান্তি, মুক্তি ও মানবতার অগ্রদূত’।

জাতীয় প্যারেড স্কয়ারের ওই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন।

আলোচনা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহান বিষয় ভিত্তিক আলোচনা করবেন। এছাড়া ভ্যাটিক্যান থেকে পাঠানো পোপ ফ্রান্সিসের একটি ভিডিও বার্তা প্রচার করা হবে।

অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে আলোচনা অনুষ্ঠান বিকাল সাড়ে ৪টায় শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলবে। মাঝে আধা ঘণ্টার বিরতি দিয়ে সাড়ে ৬টায় দ্বিতীয় পর্বে শুরু হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। টেলিভিশন, বেতার, অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্বে বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে বন্ধুরাষ্ট্র ভুটানের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশনা, ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যের ওপর টাইটেল অ্যানিমেশন ভিডিও, রবীন্দ্র সংগীত, নজরুল সংগীত, লোকসংগীত, স্পন্দন পরিবেশিত ‘মহাকালের গণনায়ক: তোরা সব জয়ধ্বনি কর’, বিশেষ নৃত্যানুষ্ঠান ‘শতবর্ষ পরেও, কনসার্ট ফর বাংলাদেশের চুম্বক অংশ, ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক দেশি শিল্পীদের পরিবেশনা এবং সব শিল্পীদের সমবেত কণ্ঠে ‘জর্জ হ্যারিসনের বাংলাদেশ’ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শেষ হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই জাতীয় আরো খবর
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Maintained By Macrosys