নিউজ ডেস্ক: ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে পুলিশের গুলিতে ১৭ বছরের এক আলজেরিয়-বংশোদ্ভূত তরুণ নিহত হওয়ার ঘটনায় উত্তাল দেশটি। টানা কয়েক রাত ধরে চলছে বিক্ষোভ। সহিংসতা দমাতে গত শুক্রবার ৪৫ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবু থামছে না বিক্ষোভ।
এদিকে, নিহত নাহেলের নানি দাঙ্গাকারীকে সহিংসতা থামানোর আহ্বান জানিয়েছে। বিএফএমটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, বাস, স্কুল এবং স্থাপনা ভাঙচুর করা তাদের উচিৎ না। তিনি পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য প্রতিবাদকারীদের বলেন।
সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেছেন, তারা নাহেলের মৃত্যুকে দাঙ্গার জন্য অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছেন।
ফ্রান্সের সরকারও বিক্ষোভকারীদের রাস্তা ছেড়ে বাড়ি ফেরার আহ্বান জানিয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, তিনি আশা করছে বিক্ষোভকারীরা শিগগিরই বাড়ি ফিরবেন।
এর আগে, দেশটির সরকারের দেওয়া পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, বিক্ষোভে ৪৯২ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ২ হাজার গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং দেশব্যাপী তিন হাজার ৮৮০টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
গত মঙ্গলবার প্যারিসের পশ্চিমদিকে নান্তেরে এলাকায় নাহেল এম নামের ওই তরুণ গাড়ি চালিয়ে যাবার সময় ট্রাফিক পুলিশ তাকে থামতে বলে। সে না থামলে পুলিশ খুব কাছে থেকে তাকে গুলি করে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, একজন পুলিশ অফিসার একটি গাড়ির চালকের দিকে বন্দুক তাক করে আছে। এরপর একটি গুলির শব্দ শোনা যায় এবং তারপর গাড়িটি থেমে যায়।
বুকে গুলিবিদ্ধ নাহেলকে জরুরি চিকিৎসা দেওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি। গুলিবর্ষণকারী অফিসারটিকে হত্যার অভিযোগে আটক করা হয়েছে। হেফাজতে থাকা ওই পুলিশ নিহত কিশোরের পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
ফরাসি মিডিয়ায় বলা হচ্ছে, পুলিশ প্রথমে ইঙ্গিত দিয়েছিল যে তরুণটি তাদের দিকেই গাড়িটি চালিয়ে দিয়ে পুলিশদের আহত করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও দেখে ধারণা হয় যে প্রকৃত ঘটনা ছিল ভিন্ন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার রাত থেকেই প্যারিস ও অন্য আরো কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ ও সহিংসতা শুরু হয়। এরপর টানা তিনদিন চলছে সহিংস বিক্ষোভ। এতে গাড়ি ও বাসস্টপে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে, ব্যারিকেড দেওয়া হয়েছে কিছু রাস্তায়, আক্রান্ত হয়েছে পুলিশ স্টেশনও। বিক্ষোভকারীদের হটাতে দাঙ্গা পুলিশ টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করেছে।
নিহতের মা মুনিয়া সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘সে সকাল বেলাও বলছিল মা আমি তোমাকে ভালোবাসি, তার পর কাজে যায়, এর এক ঘণ্টা পর আমি একটা ফোন পাই- আমাকে বলা হয় আমার ছেলেকে গুলি করা হয়েছে।’
রয়টার্স বলছে, ২০১৭ সাল থেকে ট্রাফিক স্টপে পুলিশের গুলিতে যত জন নিহত হয়েছে তার বেশির ভাগই কৃষ্ণাঙ্গ বা আরব। এ বছর ফ্রান্সে ট্রাফিক স্টপে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর এটা দ্বিতীয় ঘটনা। গত বছর ফ্রান্সে এভাবে রেকর্ড সংখ্যক মোট ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।