নিউজ ডেস্ক: ঢাকা-১৭ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুক মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।
স্থানীয় সময় আজ সোমবার সকাল ১০টায় সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চিত্রনায়কের স্ত্রী ফারহানা পাঠান ও ছেলে রওশন হোসেন পাঠান।
রওশন হোসেন পাঠান বলেন, ‘গত ৩-৪ দিন যাবৎ বাবার শরীর হঠাৎ খারাপ হয়ে যায়। মা ফোন দিয়ে আমাকে বলেন, সিঙ্গাপুরে আসতে। সংবাদটি শুনে দ্রুত আমি সেখানে যাই। হয়তো বাবা আমার জন্যই ক’দিন খুব কষ্ট করেছেন। আপনারা সবাই আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালের প্রক্রিয়া শেষ করে বাবাকে দেশে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করছি।’ এ সময় অভিনেতা ফারুকের মরদেহ মঙ্গলবার ভোরের ফ্লাইটে ঢাকায় আনা হবে বলে জানান রোশান।
অভিনেতার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এছাড়া গভীর শোক প্রকাশ করেছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি, সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু এমপি, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি প্রমুখ।
দীর্ঘ দিন ধরে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন এ চিত্রনায়ক। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ২০২১ সালের মার্চের প্রথম সপ্তাহে সিঙ্গাপুরে যান ফারুক। তখন রক্তে সংক্রমণ ধরা পড়লে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি হন।
সিঙ্গাপুরে প্রায় চার মাস ধরে আইসিইউতে ছিলেন তিনি। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় মাস ছয়েক আগে তাকে কেবিনে নেওয়া হয়। এরপর থেকে সেখানেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন ফারুক। এ সময়ের মধ্যে দুবার তার মৃত্যুর গুজব ছড়ায়। অবশেষে সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন তিনি।
১৯৪৮ সালের ১৮ আগস্ট মানিকগঞ্জের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন চিত্রনায়ক ফারুক। তবে মানিকগঞ্জে জন্ম হলেও তার শৈশব-কৈশোর ও যৌবনকাল কেটেছে পুরান ঢাকায়।
এইচ আকবর পরিচালিত ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে ঢাকাই সিনেমার তার অভিষেক হয়। প্রথম সিনেমায় তার বিপরীতে ছিলেন কবরী। এরপর ১৯৭৩ সালে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র খান আতাউর রহমানের পরিচালনায় ‘আবার তোরা মানুষ হ’ ও ১৯৭৪ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘আলোর মিছিল’ এ দুটি সিনেমায় পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি।
এ ছাড়া তার অভিনিত ‘লাঠিয়াল’, ‘সুজন সখী’, ‘নয়নমনি’, ‘সারেং বৌ’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সাহেব’, ‘আলোর মিছিল’, ‘দিন যায় কথা থাকে’, ‘মিয়া ভাই’ ব্যাপক জনপ্রিয় সিনেমায়। তিনি শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।
ফারুক ‘লাঠিয়াল’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ১৯৭৫ সালে শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন এবং ২০১৬ সালে আজীবন সদস্যের সম্মাননা পান।
অভিনয় থেকে অবসর নেওয়ার পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঢাকা-১৭ আসনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।