নিউজ ডেস্ক: ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশকে জুতা ছুড়ে মেরেছিলেন একজন সাংবাদিক। বুশ তখন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতায়। আত্মরক্ষা করেছিলেন বুশ। ফলে ওই জুতা তার গায়ে লাগেনি। কিন্তু নিজের দেশেই অপদস্ত হলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন। দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় টাইন-এরমিটাসে সরকারি এক সফরের সময় মঙ্গলবার এক ব্যক্তি তার মুখে থাপ্পড় বসিয়ে দিয়েছে। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। তবে একে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন ম্যাক্রন।
অন্যদিকে তার দেশের রাজনীতিকরা এমন হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। এ খবর দিয়ে অনলাইন বিবিসিসহ বিভিন্ন মিডিয়া। ভিডিওতে ওই সফরের সময় একটি এলাকা দেখানো হয়। চারদিকে সবুজ বেষ্টিত একটি লনে ব্যারিকেড দিয়ে লোকজনকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। দূর থেকে তাদের দিকে দৌড়ে গেলেন সাদা শার্ট পরা প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন। ব্যারিকেডের একেবারে কাছে গিয়ে জনগণের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। তিনি কথা বলতে থাকেন মাথায় লম্বা চুলের এক ব্যক্তির সঙ্গে।
চারদিকে নিরাপত্তা প্রহরী। তার মধ্যেই দু’চারটি কথা বলার পরই ওই ব্যক্তি ম্যাক্রনের মুখে ডান হাত দিয়ে ঠাস করে চড় বসিয়ে দেন। দ্রুত এগিয়ে যান নিরাপত্তারক্ষীরা। তাদের একজনকে দেখা যায় ম্যাক্রনকে দু’হাতে জাপটে ধরে সরিয়ে নিচ্ছেন ঘটনাস্থল থেকে। কিন্তু ক্ষুব্ধ ম্যাক্রন তার বেষ্টন থেকে মুক্ত হয়ে ওই ব্যক্তির দিকে ছুটে যেতে উদ্যত হন। তবে নিরাপত্তারক্ষী তাকে ছাড়েননি। ততক্ষণ অন্য নিরাপত্তারক্ষীরা ওই ব্যক্তিকে পাকড়াও করে ফেলেছেন।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, এ ঘটনাকে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি ফরাসি পত্রিকা লা ডোফিন’কে বলেছেন, অতি উগ্র-সহিংস মানুষজনকে আমরা জনগণের বিতর্কের কেন্দ্রে আসতে দিতে পারি না। তারা এমনটা দাবি করতেও পারেন না। উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রনকে থাপ্পড় মারার আগে ওই ব্যক্তি চিৎকার করে বলছিলেন- ‘ম্যাক্রনিজমের পতন হোক’। এ কথা বলতে বলতেই তিনি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রনের গালে ডান হাত দিয়ে থাপ্পড় বসিয়ে দেন। ঘটনার সামান্য পরেই আবার সেখানে সমবেত জনতার কাছে ফিরে যান ম্যাক্রন। তিনি লা ডোফিন পত্রিকাকে বলেন, আমি থামবো না। অব্যাহতভাবে আমার কাজ করে যাবো। কোনো কিছুই আমাকে থামাতে পারবে না।
হামলাকারী ওই ব্যক্তির পরিচয় এবং উদ্দেশ্য কি সে সম্পর্কে জানা যায়নি। স্থানীয়রা বলেছেন, ওই ব্যক্তি এবং অন্য আর একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রনকে থাপ্পড় দেয়ার পর ভ্যালেন্সের রাস্তায় মুহূর্তের মধ্যে নিরাপত্তারক্ষীরা নেমে পড়েন। ওদিকে হামলার সময় প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রনকে রক্ষা করেন সিকিউরিটি গ্রুপ ফর দ্য প্রেসিডেন্সি অব দ্য রিপাবলিক, যা জিএসপিআর নামে পরিচিত। এই গ্রুপটি সৃষ্টি করা হয়েছিল ১৯৮৩ সালে। শুরুতে এর সদস্য ছিলেন ৭৭ জন নারী ও পুরুষ। তাদের দায়িত্বই প্রেসিডেন্টকে সুরক্ষা দেয়া। ফরাসি টেলিভিশন চ্যানেল বিএফএম অনুযায়ী, একজন প্রেসিডেন্ট কোনো স্থানে সফরের আগে কর্মকর্তারা সে স্থান পরিদর্শন করেন। নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। সফরের সময় প্রেসিডেন্টকে খুব কাছ থেকে নিরাপত্তা দিতে দায়িত্ব দেয়া হয় সশস্ত্র ব্যক্তিদের। ওই চ্যানেলটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, জিএসপিআরের ১০ জন সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছিল ম্যাক্রনের মঙ্গলবারের ওই সফরের সময়।
ওদিকে ঘটনার পর পরই ফরাসি রাজনীতিকরা এর নিন্দা জানিয়েছেন। এর পর পরই জাতীয় পরিষদে প্রধানমন্ত্রী জ্যাঁ ক্যাসটেক্স বলেছেন, কোনো সময়ই সহিংস আচরণ, অশ্রাব্য শব্দ চয়ন এবং শারীরিক হামলা গ্রহণযোগ্য নয় গণতন্ত্রে। উগ্র বামপন্থি নেতা জ্যাঁ-লুক মেলেঙ্কন টুইটে প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন। উগ্র ডানপন্থি নেত্রী মেরি লা পেন নিন্দা জানিয়ে পোস্ট দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, গণতান্ত্রিক বিতর্ক অনেক সময় তিক্ত হতে পারে। কিন্তু শারীরিক সহিংসতা কখনো সহ্য করা যেতে পারে না।
উল্লেখ্য প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন বর্তমানে ফ্রান্সে একটি ট্যুরে রয়েছেন। সবেমাত্র তিনি মঙ্গলবার টাইন-এলমিটাসে একটি হোটেলস্কুল পরিদর্শন করেছেন।