নিউজ ডেস্ক: মাহমুদা খানম মিতুকে বিয়ে করার সময় বাবুল বেকার ছিলেন। পরে ব্যাংকে কয়েক বছর চাকরি করার পর বিসিএস দিয়ে পুলিশে চাকরি হয় বাবুলের। মুলত পুলিশ কর্মকর্তা হয়ে যাওয়ার পরই বাবুলের পরিবর্তন শুরু। একাধিক নারীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে মিতুর সঙ্গে তার দাম্পত্য কলহ লেগেই ছিল। এসবের জেরেই মিতুকে হত্যা করা হয়। এসব অভিযোগ করেছেন মিতুর মা সাহিদা মোশারফ।
তিনি জানান, বাবুল আকতার ও মিতু দুজনের বাবাই পুলিশে চাকরি করতেন। সেই সুবাদে পরিচয় থেকে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়েটা হয়। দুই দশক আগে যখন বিয়ে হয়েছিল, তখন বাবুল পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন না।
বাবুল তখন কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরের ছাত্র। তখন মিতুর সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পরও বাবুল আক্তার বেকার ছিলেন। প্রথমে চাকরি নেন একটি বেসরকারি ব্যাংকে। সেই চাকরি ছেড়ে আরেকটি ব্যাংকে চাকরি নেন বাবুল আক্তার। পরে কিছুদিন শ্বশুর মোশাররফ হোসেনের খিলগাঁওয়ের বাসায়ও থেকেছেন বাবুল।
সাহেদা মোশাররফ বলেন, বিয়ের প্রথম দিকে বাবুলের সঙ্গে মিতুর সম্পর্ক ভালোই ছিল। আমার দুই মেয়ে, কোনো ছেলে নেই। বাবুলকে নিজের ছেলের মতো করে দেখেছি। বিয়ের পর দিনের পর দিন বাবুল আমার বাসায় থেকেছে। চাকরির জন্য লেখাপড়া করেছে। বেকার বাবুলের ব্যাংকে চাকরি হয়েছে। সেই চাকরি থাকা অবস্থায় বাবুল বিসিএস দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা হয়। এই যে বাবুল পুলিশ অফিসার হয়ে গেল, এরপর তার মধ্যে পরিবর্তন আসা শুরু হলো। আমার মেয়ে মিতুকে অবহেলা করত।
পুলিশের দাপট ও টাকার জোরে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন বাবুল। এমনটি জানিয়ে মিতুর মা বলেন, ‘আমার মেয়ে একদিন রাত ৩টার সময় ফোন দিয়ে বলেছিল, “মা, আমি কালই ঢাকায় চলে আসব।” তখন আমি মিতুর কাছে জানতে চেয়েছিলাম, কী হয়েছে? মিতু তখন বলেছিল, কক্সবাজারের একটি হোটেলে একজন নারীর সঙ্গে বাবুলকে দেখেছে মিতু। বহুবার আমার মেয়ে আমাকে বলেছিল। শুধু দুই সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সে বাবুলের সঙ্গে সংসার করেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মেয়ে আর বাঁচতে পারল না। ওরা আমার নাতির সামনে আমার মেয়েকে খুন করে ফেলল।’
তবে বাবুল আক্তারের ভাই আইনজীবী হাবিবুর রহমান দাবি করেছেন, তার ভাই স্ত্রী হত্যায় জড়িত নন। তিনি বলেছেন, বাবুল আক্তারের সঙ্গে তার ভাবির ‘কোনো দাম্পত্য কলহ ছিল না’। বাবুল আকতারের বিরুদ্ধে পরকীয়া প্রেমের যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা–ও সত্য নয়। ষড়যন্ত্র করে তাঁর ভাইকে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় সড়কে খুন হন পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু।
পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সদরদফতরে যোগ দিতে ওই সময় ঢাকায় ছিলেন বাবুল। এর আগে তিনি চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে কর্মরত ছিলেন।
হত্যাকাণ্ডের পর নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন বাবুল। তবে পুলিশ তদন্তে তার সম্পৃক্ততার গুঞ্জন ছিল আগে থেকেই।
এরপর তিনি চাকরি থেকে ইস্তফা দেন। বাবুলের দাবি তার স্ত্রী জঙ্গি হামলায় নিহত হয়ে থাকতে পারেন। তবে তার শ্বশুরের দাবি, বাবুল এক এনজিওকর্মীর সঙ্গে পরকীয় করছিলেন। বিষয়টি জেনে ফেলায় মিতুকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে ফেলেন বাবুল।