1. ph.jayed@gmail.com : akothadesk42 :
  2. admin@amaderkatha24.com : kamader42 :
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩৫ অপরাহ্ন

পতিতাবৃত্তি যে গ্রামের প্রধান পেশা

আমাদের কথা ডেস্ক
  • আপডেট : রবিবার, ২৮ মে, ২০২৩

নিউজ ডেস্ক: পৃথিবীর অন্যতম আদিম পেশা পতিতাবৃত্তি। তবে বিশ্বের বেশির ভাগ রাষ্ট্র ও সমাজেই এটিকে ঘৃনার নজরে দেখা হয়। বৈধ পেশার স্বীকৃতিও মেলে না। তবে এমনও সমাজ আছে যেখানে এ পেশা রীতিমতো ঐতিহ্যের অংশ। তেমনি ভারতের রাজস্থানের একটি গ্রাম। দিল্লি থেকে এই গ্রামের দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার। কিন্তু অবস্থানগত দূরত্ব তেমন বেশি না হলেও, আসলে এই গ্রাম আধুনিক ভারতবর্ষ থেকে কয়েকশ বছর পিছিয়ে আছে। কারণ এই গ্রামের অধিকাংশ মেয়েই এখনও মধ্যযুগীয় ঐতিহ্য মেনে পতিতাবৃত্তিকেই তাদের প্রধান পেশা বলে মেনে নেন।

রাজস্থানের খাকরানাগলা গ্রামে প্রধানত বেদিয়া আর নট সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। আপাতদৃষ্টিতে এই গ্রামের কোনও বিশেষত্ব চোখে পড়বে না। সাদামাটা কুঁড়েঘর, বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রাইমারি স্কুল কিংবা অনুন্নত স্বাস্থ্যকেন্দ্র দেখে ভারতের আর পাঁচটা গ্রামের সঙ্গে এর কোনও পার্থক্য হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু খাকরানাগলার আশেপাশের অঞ্চলে এই গ্রামের নিজস্ব পরিচিতি রয়েছে। এবং তা খুব সম্মানজনক পরিচিতি নয়। এই গ্রাম পরিচিত ‘পতিতাদের গ্রাম’ হিসেবে। কারণ এই গ্রামের অধিকাংশ পরিবারেই এখনও হাঁড়ি চড়ে বাড়ির মেয়েদের পতিতাবৃত্তির মাধ্যমে উপার্জিত অর্থের সাহায্যে। বেদিয়া ও নট মেয়েরা বংশপরম্পরায় নর্তকীর পেশায় নিযুক্ত ছিলেন।

সামন্ততান্ত্রিক যুগে সামন্ত প্রভুদের বাড়িতে তারা বাঈজির কাজ করে উপার্জন করতেন। কালে কালে সামন্ত প্রভুরা বিলুপ্ত হয়েছেন। বেদিয়া আর নটরাও নর্তকীর কাজ ছেড়ে নেমেছেন পতিতাবৃত্তিতে। তাদের এই কাজকে আদৌ নিন্দনীয় মনে করেন না ওই মেয়েদের পরিবার, কিংবা গ্রামের অন্য বাসিন্দারা। বরং মেয়েরা কিশোরী হয়ে উঠলে পরিবারের তরফেই উৎসাহ দেওয়া হয় পতিতাবৃত্তিতে নামার ব্যাপারে।

বিয়ে হয়ে গেলে মেয়েরা আর থাকতে পারবেন না পতিতাবৃত্তিতে। তাই মেয়েদের বিয়ের ব্যাপারে উৎসাহ দেখান না পরিবারের সদস্যরাও। নিজেদের বাড়ি, গ্রামের পার্শ্ববর্তী হাইওয়ে কিংবা দিল্লি-মুম্বাইয়ের মতো বড় শহরকে কেন্দ্র করে বিস্তার পায় এইসব মেয়ের পেশা। অনেক সময়ে এই মেয়েদের দাদা বা ভাইরাই তাদের ‘দালাল’ হিসেবে কাজ করেন।

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অফ সোশ্যাল ওয়ার্কের প্রাক্তন অধ্যাপক কে কে মুখোপাধ্যায়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে খাকরানাগলায় মোট ৯১টি পরিবারের বাস। তাদের মধ্যে নট, বেদিয়া আর গুজ্জর সম্প্রদায়ভুক্ত পরিবারের সংখ্যা ৭৫টি। তাদের মধ্যে ৪৬টি পরিবার বাড়ির মেয়েদের পতিতাবৃত্তির উপর নির্ভরশীল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খাকরানাগলার বাইরের চেহারাটা একটু একটু করে বদলাচ্ছে। একটি-দুটি করে হাইরাইজ দেখা দিচ্ছে খাকরানাগলার মাটিতে। কিন্তু পতিতাবৃত্তির এই আধিপত্য কমার কোনও লক্ষণ নেই।

কিন্তু কেন আসে না পরিবর্তন? সমাজবিদরা বলছেন, আসলে গ্রামের পুরুষরাই এই প্রথা ভাঙার ব্যাপারে তেমন উৎসাহী নন। তারা বিষয়টিকে মোটা টাকা উপার্জনের সহজ রাস্তা হিসেবেই দেখছেন। আর খাকরানাগলার বাসিন্দারা দায়ী করছেন প্রশাসনের উদাসীনতাকে। তাদের বক্তব্য, সামাজিকভাবে তাদের ব্রাত্য করে রাখা হয়েছে। গ্রামে পড়াশোনার তেমন ব্যবস্থা নেই। সেই প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে যুবকরা চাকরির যোগ্যতা অর্জন করলেও, তাদের জাতিগত পরিচয় জানামাত্র কর্তৃপক্ষ চাকরির আবেদনপত্র বাতিল করে দেয়।

কিন্তু বেদিয়ারা তফশিলী জাতি বলে চিহ্নিত। এ প্রসঙ্গে বেদিয়ারা বলছেন, সেই সংরক্ষণের বিন্দুমাত্র সুবিধাও তারা পাচ্ছেন না। অবস্থা পরিবর্তনের জন্য একজন রাজনৈতিক প্রতিনিধির প্রয়োজন অনুভব করছেন বেদিয়া আর নটরা। যিনি তাদের যন্ত্রণার কথা তুলে ধরতে পারবেন সংসদে। খাকরানাগলার মানুষের আশা, সরকার উদ্যোগী হলে এই সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিবর্তন আসবে, আর পতিতাবৃত্তির শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পাবেন খাকরানাগলার মেয়েরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই জাতীয় আরো খবর
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Maintained By Macrosys