ফাতেমা খাতুন: পরিবর্তন প্রয়োজন এইসব মানসিকতার। নারী নারীর শত্রু নন; পুরুষও নারীর শত্রু নন। নারীর শত্রু মূলত পুরুষতান্ত্রিকতা, যা নারীর দুর্বল সামাজিক অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে নারীকেই নারীর প্রতিপক্ষ হিসেবে উপস্থাপন করে আর পুরুষের অত্যাচার-নির্যাতনকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে শেখায়।
এই চর্চা নারীকে নারীর শত্রুর কাঠগড়ায় এমনভাবে দাঁড় করিয়ে দেয় যেন নারী বারবার পুরুষের মধ্যেই নির্ভরতা খুঁজে পায় যেখানে ঘরের বাইরের পৃথিবী নিয়ন্ত্রণের যুদ্ধে পুরুষের হানাহানি-মারামারি নিত্যদিনের ঘটনা, সেখানে শাশুড়ি-বউ-ননদ সম্পর্ক কিংবা মামুলি কিছু সমস্যার জন্য কেন এক নারীকে অন্য নারীর প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানো?
নারীর দুর্বল সামাজিক অবস্থান তাঁকে শেখায়, সংসারটাই তাঁর একমাত্র অবলম্বন। তাই সেই সংসারের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই নারীতে নারীতে শুরু হয় যুদ্ধ। আবার অনেক নারী আছেন যাঁরা পুরুষের শাসন-শোষণকেই আদর্শ পারিবারিক ব্যবস্থা বলে মনে করেন। এই শাসন-শোষণ করার প্রবণতা পুরুষের আচরণে না থাকলে তাঁরা অনেক সময় দুর্বল পুরুষের আখ্যা লাভ করেন।
অন্যদিকে সব পুরুষ যেমন পুরুষতান্ত্রিকতার চর্চা করেন না, ঠিক একইভাবে এই পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা যে শুধু পুরুষই লালন করেন, তা-ও কিন্তু নয়। কখনো কখনো নারীর মধ্যেও পুরুষতান্ত্রিক চর্চা প্রবলভাবে লক্ষ করা যায়।
যে মানসিকতা একজন নারীকে অন্য একজন নারীর প্রতি সহিংস কিংবা বিরূপ করে তোলে তার উৎসমূলে পুরুষতান্ত্রিকতা; যা নিজস্ব বুদ্ধি-বিবেচনা তৈরি হওয়ার আগেই এক নারীকে অন্য নারীকে শত্রু ভাবতে শেখায়। দ্বন্দ্বের এই শিক্ষা পুরুষতন্ত্রকে আরও পাকাপোক্তভাবে টিকিয়ে রাখছে।