নিউজ ডেস্ক: ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতাকে থানায় নিয়ে নির্যাতন এবং পরবর্তীতে নানা নাটকীয়তার পর এবার সেদিনের ইটিটি রুমে ঘটে যাওয়া ঘটনার ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে। ভিডিওতে বারডেম হাসাপাতলে নারীদের জন্য নির্ধারিত ওই ইটিটি রুমে দেখা যায় এডিসি হারুনকে। সাধারণত নারীদের জন্য নির্ধারিত ইটিটি রুমে কোনো পুরুষের প্রবেশ করার কথা নয়। ইতিমধ্যে সেই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
এদিকে এ ঘটনায় মুখ খুলেছেন ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার সানজিদা আফরিন। যিনি রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) আজিজুল হক মামুনের স্ত্রী। তিনি ৩১তম বিসিএসের কর্মকর্তা। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ক্রাইম বিভাগে অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।
সানজিদা আফরিন বলেন, ‘আমার হাজবেন্ড তার সঙ্গে থাকা লোকজনকে বলেন, “এই দুজনের ভিডিও কর”।’ গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।
সানজিদা আফরিন নিপা বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে আমার কার্ডিয়াক সমস্যা হচ্ছে। সেই ২০১৯ সাল থেকে আমি হাইপারটেনশনের ওষুধ খাচ্ছি। গত ৪-৫ মাস ধরে আমার সমস্যাটা বেড়ে যায়। গত ২-৩ সপ্তাহ ধরে চেস্ট পেইনটা একটু বেড়ে যায়। তাই তখন আমার একজন ডাক্তার দেখানোর দরকার ছিল। যেহেতু বারডেম হাসপাতাল স্যারের (এডিসি হারুন) জুরিসডিকশনের (আওতা) মধ্যে পড়ে তাই ডাক্তারের সিরিয়াল পাওয়ার জন্য আমি স্যারের হেল্প চেয়েছিলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে যখন ডাক্তার দেখাতে যাই তখন ডাক্তার কনফারেন্সে ছিলেন। পরে আমি স্যার ( হারুন) কে জানাই স্যার ডাক্তার তো কনফারেন্সে হয়তো আজ দেখবেন না। তিনি হয়তো আশেপাশে ছিলেন বললেন দাঁড়ান আমি আসতেছি দেখি। এরপর স্যার এলেন। আসার পর একটা ডাক্তার ম্যানেজ হলো। এরপর ডাক্তার কিছু টেস্ট দিলেন। আমি ব্লাড টেস্টের জন্য স্যাম্পল দিলাম। ইকো টেস্ট আর ইসিজি করানো হলো। যখন ঘটনা আমি তখন ইটিটি করাচ্ছিলাম প্রায় শেষের দিকে বাইরে গোলমালের আওয়াজ পেলাম। প্রথম যে সাউন্ডটা (শব্দটা) কানে আসে যে স্যারই (এডিসি হারুন) চিৎকার করে বলছেন—‘ভাই আপনি আমার গায়ে হাত তুললেন কেন? আপনি তো আমার গায়ে হাত তুলতে পারেন না’।’
সানজিদা বলেন, ‘আমার প্রথমে ধারণা হয়েছিল যে হয়তো অন্য কারও সঙ্গে স্যারের (হারুন) ঝামেলা হয়েছে। কিন্তু এর কিছুক্ষণ পর আমি দেখতে পাই আমার হাজবেন্ড (আজিজুল হক মামুন), উনি আসলে ওখানে কী করছিলেন কেন গিয়েছিলেন আমি জানি না। ওনাকে টোটালি আউট অব মাইন্ড লাগছিল (মানসিকভাবে স্থির ছিলেন না) এবং খুবই উত্তেজিত ছিলেন। ওনার সঙ্গে আরও কয়েকজন ছেলে ছিল, আমি আসলে তাদের চিনি না। তারা স্যারকে (এডিসি হারুন) মারতে মারতে ইটিটি রুমে নিয়ে এলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওই সময় স্যার নিজের সেফটির (নিরাপত্তার) জন্য আমি যেখানে দাঁড়ানো ছিলাম সেই রুমের কোণার দিকে দৌঁড়ে এসে দাঁড়ালেন। ইটিটি রুমে এত লোক ঢোকাতে তখন সেখানে একটা অকওয়ার্ড সিচুয়েশন (বিব্রতকর পরিস্থিতি) তৈরি হয়। কারণ ইটিটি রুমে রেস্ট্রিকশন (কড়াকড়ি) থাকে। তখন আমি শাউট করছিলাম।’
সানজিদা বলেন, ‘এরপর আমার হাজবেন্ড তার সঙ্গে থাকা লোকজনকে বললেন, ‘এই দুজনের ভিডিও কর’। এরপর সবাই ফোন বের করে ভিডিও করা শুরু করে। যখন তারা ভিডিও শুরু করে তখন আমি আমার হাজবেন্ড এবং তার সঙ্গে থাকা লোকজনের সঙ্গে চিল্লাচিল্লি শুরু করছিলাম। এরপর যারা ভিডিও করছে আমি তাদের মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে তাদের হাতের সঙ্গে লেগে আমার হাতেও সামান্য ব্যথা পাই। কারণ আমি চাচ্ছিলাম না সেই অবস্থায় কেউ আমার ভিডিও করুক। আর আমার হাজবেন্ডের সঙ্গে যেসব ছেলে ছিল আমি তাদের কাউকে চিনতামও না।’
‘সেই অবস্থায় আমার হাজবেন্ড আমাকে চড় মারেন এবং স্যারকে বের করার চেষ্টা করছিলেন। তখন স্যারের কাছে বিষয়টি সেফ মনে হয়নি। এরপর স্যার কিছুক্ষণ অপেক্ষা করছিলেন। তখন হাসপাতালের সিকিউরিটির লোকজনও এলেন। এর ১০-১৫ মিনিট পর ফোর্স এলে তারা সেখান থেকে বের হয়ে যায়’ যোগ করেন সানজিদা আফরিন।
এসব ঘটনার স্থান কোথায় এবং কয়টার দিকের ঘটনা জানতে চাইলে সানজিদা আফরিন বলেন, ‘আমার ডাক্তার দেখানোর সিরিয়াল ছিল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে। এরপর ৭টার দিকে স্যার (হারুন) এসেছিলেন, পরে ডাক্তারও এসেছিলেন। এরপর আমি ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকি। ঘটনা ঘটেছে বারডেম হাসপাতালের চারতলার কার্ডিওলজি বিভাগে।’