আগামী ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল শুক্রবার রাত পৌনে ১০টায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল আলমগীর। এর আগে রাত ৯টায় জরুরি বৈঠকে বসেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা।
লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমি আপনাদের এখন যে বার্তা দেব, এই বার্তা সারা দেশের মানুষের জন্যই একটা স্বস্তির বার্তা নিয়ে আসবে। আমি আপনাদের অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, আমাদের কোটি কোটি মানুষের সবচেয়ে প্রিয় মানুষ, যিনি দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর ধরে নির্বাসিত অবস্থায় বিদেশে রয়েছেন এবং বিগত প্রায় এক যুগ ধরে তিনি দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং আমাদের দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং আমাদের গণতান্ত্রিক উত্তরণের ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়ে আমাদের সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের সেই সংগ্রামী নেতা, এ দেশের গণমানুষের অত্যন্ত প্রিয় মানুষ তারেক রহমান, আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, তিনি আগামী ২৫ ডিসেম্বর ঢাকার মাটিতে আমাদের মাঝে এসে পৌঁছবেন।
’
২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর তারেক রহমানকে আটক করা হয়। ১৮ মাস কারাগারে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মুক্তি পেয়ে ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসা নেওয়ার জন্য লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয়।
এরপর বিভিন্ন মামলায় তারেক রহমানের সাজার রায় বাতিল এবং কোনো কোনো মামলায় আইনি প্রক্রিয়ায় অব্যাহতি পান। এর পর থেকে তাঁর দেশে ফেরার আলোচনা শুরু হয়। তারেক রহমান শিগগিরই ফিরবেন—এমন কথা বিএনপি নেতারা কয়েক মাস ধরেই বলে আসছেন। তবে কেউ সুনির্দিষ্ট দিন-তারিখ বলেননি।
বিএনপি চেয়ারপারসন অসুস্থ খালেদা জিয়ার জীবন সংকটাপন্ন হয়ে উঠলে ধারণা করা হচ্ছিল তারেক রহমান দ্রুতই দেশে ফিরছেন।
সম্প্রতি তিনি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লিখেছিলেন, ‘এমন সংকটকালে মায়ের স্নেহ-স্পর্শ পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা যেকোনো সন্তানের মতো আমারও রয়েছে। কিন্তু অন্য আর সবার মতো এটা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমার একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়। রাজনৈতিক বাস্তবতার এ পরিস্থিতি প্রত্যাশিত পর্যায়ে উপনীত হওয়ামাত্রই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে আমার সুদীর্ঘ উদ্বিগ্ন প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে বলেই আমাদের পরিবার আশাবাদী।’
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাউদ্দিন আহমদ, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন।
একটি গোষ্ঠী দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্টে উঠেপড়ে লেগেছে : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘দেশ অত্যন্ত সংকটের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। গত এক বছরে বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন ব্যক্তি-সংগঠনের সদস্যরা প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছে যে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের নির্বাচন তারা হতে দেবে না। বাধাগ্রস্ত করবে। একটি দল বা গোষ্ঠী দেশের মানুষের শান্তি বা স্থিতিশীলতা বিনষ্টে উঠেপড়ে লেগেছে।’
গতকাল সন্ধ্যায় রাজধনীর ফার্মগেটে অবস্থিত কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মসূচির আলোচনাসভায় তিনি এসব কথা বলেন। তারেক রহমান বলেন, “এ কারণেই বিএনপি এবং একই সঙ্গে যাঁরা বাংলাদেশের অস্তিত্ব, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করেন, দল ছোট-বড় বিষয় না, যাঁরা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন, ‘সবার আগে বাংলাদেশ’—এই নীতিতে যাঁরা বিশ্বাস করেন, সবাইকে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কারণ যারা এ দেশের স্বাধীনতা ধ্বংস করতে চায়, এ দেশের সার্বভৌমত্ব ধ্বংস করে স্থিতিশীলতা ধ্বংস করতে চায়, তারা যে তাদের ষড়যন্ত্র শুরু করে দিয়েছে, আজকে ওসমান হাদির ঘটনার মধ্য দিয়ে তা প্রমাণিত হয়।”
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীর সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খানের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির।