নিউজ ডেস্ক: স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিবহন পুলের গাড়ি চালক আব্দুল মালেককে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। অবৈধ অস্ত্র, জাল নোটের ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করার পর র্যাব বলছে তৃতীয় শ্রেণির এই কর্মচারীর বিপুল সম্পদের খোঁজ পেয়েছেন তারা।
মালেককে গ্রেপ্তারের পর র্যাব জানায়, তার দুটি সাততলা ভবন, নির্মাণাধীন একটি ১০ তলা ভবন, জমি, গরুর খামার ও বিভিন্ন ব্যাংকে নামে-বেনামে বিপুল পরিমাণ গচ্ছিত অর্থের সন্ধান পাওয়া গেছে। তার সম্পদের অর্থমূল্য শত কোটি টাকারও ওপরে।
শুধু অঢেল সম্পদ অর্জন নয়, মালেকের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন পদে নিজের পরিবারেরই সাতজনকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তাদের মধ্যে একজন মালেকের ভাই আব্দুল খালেক। তিনি অধিদপ্তরে অফিস সহকারী হিসেবে চাকরি করছেন।
সোমবার ভাইয়ের (চালক মালেক) সুপারিশে চাকরির বিষয়ে তার কাছ থেকে জানতে চাইলে খালেক বলেন, ‘আমিও ১৯৯৪ সাল থেকে অফিস সহকারী হিসেবে অধিদপ্তরে আছি। ১৯৯৩ সালে পত্রিকার সার্কুলার দেখে চাকরির আবেদন করেছি। ৯৪ সালে ইন্টারভিউ দিয়ে চাকরি নিয়েছি। আমার চাকরিতে কারো কোনো সহযোগিতা ছিল না। ইন্টারভিউ দিয়ে পাস করে নিয়ম অনুযায়ী যোগদান করেছি’।
মালেকের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘যে বিষয়গুলো আমি পত্রিকায় পড়লাম সেগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভালোভাবে খতিয়ে দেখুক।’
মালেকের বিরুদ্ধে রাজধানীর তুরাগে তার সাততলার দুটি বিলাসবহুল বাড়িতে ২৪টি ফ্ল্যাট, ১২ কাঠার আরেকটি প্লট ছাড়াও হাতিরপুলে নির্মাণাধীন ১০তলা ভবনের মালিকও হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে তার ভাই খালেক বলেন, ‘আমার বাবার জীবদ্দশায় আমাদের অনেক জমিজমা দিয়ে গেছেন। আজ থেকে অনেক বছর আগের কথা, তখন পাঁচ হাজার টাকা কাঠা দামে জমি পাওয়া যেত। বাবা আমাকে ও ভাইকে অনেক জমি কিনে দিয়েছেন। আর হাতিরপুলে যেই জমির কথা বলা হয়েছে সেটাও আমার বাবার জমি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাবা মারা যাওয়ার আগে এই জমি আমার মা ও ভাই-বোনদের দিয়ে গেছেন। এখন এটা ডেভেলপারকে দিয়ে আমরা ফ্ল্যাট বানাচ্ছি। আর যেই গরুর খামারের কথা এসেছে সেই জমিও আমার বাবার কিনে দিয়ে গেছেন। কিছু জমি বাবা তার পেনশনের টাকায় কিনে দিয়ে গেছেন। আমার বাবা ২০০৫ সালে মারা গেছেন, তিনি জীবিত থাকলে জমি-জমার বিষয়ে আরও ভালো বলতে পারত।’
এদিকে মালেকের বিরুদ্ধে অনিয়মের মাধ্যমে তার মেয়ে নৌরিন সুলতানা বেলিকে অধিদপ্তরের অফিস সহকারী পদে, ভাতিজা আব্দুল হাকিমকে অফিস সহায়ক পদে, বড় মেয়ে বেবির স্বামী রতনকে ক্যান্টিন ম্যানেজার হিসেবে, ভাগ্নে সোহেল শিকারীকে ড্রাইভার পদে, ভায়রা মাহবুকে ড্রাইভার পদে, নিকটাত্মীয় কামাল পাশাকে অফিস সহায়ক পদে চাকরি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।
রোববার তুরাগের বাড়ি থেকে গ্রেফতারের সময় মালেকের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগজিন, পাঁচ রাউন্ড গুলি, দেড় লাখ বাংলাদেশি জাল নোট, একটি ল্যাপটপ ও মোবাইল উদ্ধার করে র্যাব-১।
তদন্তসংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, ব্যক্তিগত জীবনে দুটি বিয়ে করেছেন আবদুল মালেক। প্রথম স্ত্রী নার্গিস আক্তারের নামে তুরাগ থানাধীন দক্ষিণ কামারপাড়া রমজান মার্কেটের পাশে ছয় কাঠা জায়গার ওপর সাততলার (হাজী কমপ্লেক্স) দুটি আবাসিক ভবন রয়েছে। যেখানে গড়েছেন ২৪টি ফ্ল্যাট।
পাশাপাশি স্থানেই আনুমানিক ১০-১২ কাঠার প্লট রয়েছে। বর্তমানে সপরিবারে সেখানকার একটি ভবনের তৃতীয়তলায় বসবাস করেন এবং বাকি ফ্ল্যাটগুলোর কয়েকটি ভাড়া দেয়া রয়েছে। এর বাইরে ২৩, ফ্রি স্কুল রোড, হাতিরপুলে পৈতৃক সাড়ে চার কাঠা জায়গার ওপর দশতলা নির্মাণাধীন ভবন আছে।
মেয়ে বেবির নামে দক্ষিণ কামারপাড়ায় প্রায় ১৫ কাঠা জায়গার ওপর ‘ইমন ডেইরি ফার্ম’ নামে একটি গরুর খামার রয়েছে যাতে প্রায় ৫০টি বাছুরসহ গাভী রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ‘ড্রাইভার্স অ্যাসোসিয়েশন’ নামে একটি সংগঠন তৈরি করে নিজে সেই সংগঠনের সভাপতি পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। এই সংগঠনের একক ক্ষমতাবলে তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চালকদের ওপর একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করেছেন। চালকদের নিয়োগে, বদলি ও পদোন্নতির নামে তিনি বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসনকে জিম্মি করে বিভিন্ন ডাক্তারদের বদলি ও পদোন্নতি এবং তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের নিয়োগের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করেছেন এই মালেক ড্রাইভার।
এদিকে, বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার কারণে গাড়িচালক আব্দুল মালেককে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সোমবার বিকালে সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।