নিউজ ডেস্ক: মধ্য যুগের বর্বরতাও হার মেনেছে ডিজিটাল যুগে এসে। কেন এমন হচ্ছে? মৃত লাশকে ধর্ষণ! এটা কল্পনা করা যায়? বিকৃত মানসিকতা কোথায় গিয়ে ঠেকেছে ভাবা যায়? মৃত্যুর পরও নারী নিরাপদ নয় কুলাঙ্গার মুন্নাদের কাছে। কোন বিশেষনে বিশেষন করব বিকৃত মানসিক মুন্নাকে? এক বছরে পাঁচ লাশকে ধর্ষণ করেছে। ঠান্ডা মাথায় ধর্ষণ করে ঘুরে বেরিয়েছে। হেসে খেলে দিন পার করেছে।
একটুও তার বুক কাঁপেনি। তারপরও শেষ রক্ষা হয়নি। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বুদ্ধিমত্তায় ডোম ঘরের ধর্ষক মুন্নাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় মুন্না ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দিতে অস্বাভাবিক কর্মকাণ্ডের কথা স্বীকার করছে। তবে সে কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত নয় বলে জানিয়েছে। মুন্না বলেছে, রাতে মর্গে সে একাই থাকত। নিরিবিলি পরিবেশ এবং কোনো লোকজন না থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে। তার কথা, মৃত মানুষের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক দোষের কিছু না। কত বড় কলিজা হলে এমন কথা বলতে পারে সে।
গত বছরের ২৯ মার্চ থেকে চলতি বছরের ২৩ আগস্ট পর্যন্ত অন্তত পাঁচজন মৃত কিশোরীর লাশ ধর্ষণ করা হয়েছে বলে প্রমাণ পেয়েছে সিআাইডি। সবকটি ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত মুন্না। এই কিশোরীদের বয়স ছিল ১১ থেকে ১৭ বছর। আত্মহত্যার পর তাদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে নেয়া হয়েছিল। লাশগুলোর সঙ্গে শারীরিক সংসর্গ করেছিলেন ডোমের সহযোগী বিশ বছরের মুন্না ভক্ত ।
মুন্নার বাড়ি রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের জুরান মোল্লার পাড়ায়। সে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের কোনো কর্মচারী নয়। হাসপাতালের ডোম যতন কুমারের ভাগ্নে হওয়ার সুবাদে মুন্না সেখানে কাজ করত। মর্গে আসা মরদেহগুলো সে গ্রহণ করত। আত্মহত্যাকারী ওই কিশোরীদের লাশ বিকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে মর্গে আনা হয়। তাই পরীক্ষা-নিরীক্ষার এসব লাশ কাটার সময় নির্ধারণ ছিল পরদিন। রাতের বেলা লাশগুলো মর্গে রাখা হতো। মুন্না থাকত সেখানেই। লাশ পাহারার দায়িত্বও ছিল তার ওপর। এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে বিকৃত মানসিকতা চরিতার্থ করত মুন্না।
সিআইডি জানিয়েছে, বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা এই প্রথম ধরা পড়েছে। প্রযুক্তির কল্যাণে একটি হাসপাতাল মর্গের ঘটনা ধরা পড়েছে। সারা দেশের অন্য হাসপাতালগুলোতেও অনেক ডোম কাজ করেন। তারা যে এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে না সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। খুঁজলে আরও অনেক পাওয়া যেতে পারে। তাই অন্যান্য হাসপাতালে সিআইডির নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
কিভাবে ঘটনা ধরা পড়ে? বেশ কয়েক তরুণীর অপমৃত্যুর ঘটনায় সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ থেকে হাই ভেজাইনাল সোয়াবে (এইচভিএস)’ সিআইডির ডিএনএ ল্যাবে পাঠানো হয়। উদ্দেশ্য ছিল মৃত্যুর আগে ওইসব তরুণী ধর্ষিত হয়েছেন কিনা তা জানা। চলতি বছর ছয় মাসে মোহাম্মদপুর ও কাফরুল থানার অন্তত পাঁচটি ঘটনায় পুরুষ বীর্যের উপস্থিতি পাওয়া যায়। এ আলামতের পূর্ণাঙ্গ ডিএনএ প্রোফাইল একই ব্যক্তির বলে প্রমাণিত হয়। একের পর এক তরুণীর শরীরে একই ব্যক্তির ডিএনএ নমুনা দেখে চমকে ওঠেন ডিএনএ ল্যাবের কর্মীরা। ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে তৎপরতা শুরু করেন তদন্ত কর্মকর্তারা।
প্রথমে তাদের সন্দেহ হয়- এটা কোনো সিরিয়াল কিলারের কাজ হতে পারে। ধর্ষণের পর ওই কিশোরীদের হত্যা করা হতে পারে। অথবা ধর্ষণের অপবাদ সইতে না পেরে তারা আত্মহত্যা করেছেন। এর রহস্য বের করতে মাঠে নামেন সিআইডি। প্রথমেই তারা খোঁজার চেষ্টা করেন- ওইসব কিশোরীর শরীরে বলপ্রয়োগজনিত কোনো আঘাতের চিহ্ন আছে কিনা। কিন্তু অনুসন্ধানে কোনো আঘাতের চিহ্ন বা মৃত্যুর আগে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তাই মর্গকে ঘিরেই সন্দেহ তৈরি হয়। মর্গে কর্মরত ডোমদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। অন্য ডোমদের জিজ্ঞাসাবাদ করা অবস্থায় মুন্না ভক্ত বিষয়টি আঁচ করতে পেরে পালিয়ে যায়। এতে তার প্রতি সন্দেহ তীব্র হয়।
বৃহস্পতিবার রাতে মুন্নাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার কাছ থেকে সংগ্রহ করা ডিএনএ আলামত পরীক্ষা করা হয়। এ আলামত ডিএনএ ল্যাবে থাকা আলামতের সঙ্গে মিলে যায়।
মুন্না ভক্ত চার বছর ধরে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গের লাশকাটা ঘরে কাজ করে। ঢাকায় তার থাকার জায়গা নেই। সে মর্গেই থাকে। লাশকাটা ঘরেই ঘুমায়। ভালো লাশের দিকেই তার নজর ছিল। আত্মহত্যাজনিত কারণে যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদেরই সে ধর্ষণ করেছে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান সেলিম রেজা জানিয়েছেন, এই যৌন বিকৃতিকে নেক্রোফিলিয়া বলা হয়।
এমন নেক্রোফিলিয়ায় দেশে আর কোন ম্ন্নুা জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা জরুরি। তাই হয়তো দেশের ডোম ঘরগুলোতে নজরদারি করা শুরু হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা লাশের সঙ্গে এমন হবে এটা কোনদিনই ভাবেনি কেউ। ডিজিটাল যুগে এসে মানুষ মধ্য যুগকে ছাড়িয়ে যাবে- এটা ভাবনার বাইরে।