নিউজ ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের পুরো গণতন্ত্র এখন ঝুঁকিতে। বিশেষ করে গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর রিপাবলিকানরা যেভাবে ভিত্তিহীন, অপ্রমাণিত ভোট চুরির অভিযোগ করেছেন তাতে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় মৌলিক পরিবর্তন এসেছে। এসব মিলে কতগুলো রাজ্যে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখা গেছে তা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের ন্যূনতম মানদ- বজায় রাখে না। যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের পক্ষের কমপক্ষে ১৮৪ জন বিশিষ্ট নাগরিক, শিক্ষাবিদ এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন ডিউক ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রফেসর জন অলড্রিচ, ওহাইও নর্দার্ন ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রফেসর রবার্ট আলেকজান্ডার, ইউনিভার্সিটি অব পিটসবুর্গের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রফেসর এমিরিটাস ব্যারি আমেস, ইউনিভার্সিটি অব ডেনভারের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক প্রফেসর ডেবোরাহ আভান্ট, ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রফেসর ল্যারি এম বার্টেলস, ইউনিভার্সিটি অব ভারমন্টের লিবারেল আর্টসের প্রফেসর রবার্ট ভি. বার্টলেট প্রমুখ। বিবৃতিতে তারা বলেছেন, এই বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী আমরা গণতন্ত্রের স্কলার বা প-িত।
যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক নির্বাচনের অবনতিশীল পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছি আমরা। দেখেছি উদার গণতন্ত্রের জন্য তা উদ্বেগজনক। বিশেষ করে, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি যে, দেশজুড়ে রিপাবলিকান নেতৃত্বাধীন লেজিসলেটররা এমন সব প্রস্তাব বা তা বাস্তবায়ন করেছেন- যা নির্বাচনী ব্যবস্থার মৌলিক পরিবর্তন ঘটিয়েছে বলে আমাদের মনে হয়েছে। এই নির্বাচনে অপ্রমাণিত এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে ধ্বংসাত্মক ‘নির্বাচন’ চুরির অভিযোগ করা হয়েছে।
বিবৃতিতে তারা আরো বলেছেন, গণতন্ত্র যখন ভেঙে পড়ে, তখন তা পুনরুদ্ধারে কয়েক বছর, কখনো কখনো কয়েক দশক সময় লেগে যায়। এ প্রক্রিয়ায় সহিংসতা এবং দুর্নীতি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। পক্ষান্তরে মেধাবী এবং সম্পদশালীরা অধিক স্থিতিশীল কোনো দেশে পালিয়ে চলে যান। এতে জাতীয় সমৃদ্ধি কমে যায়। শুধু আমাদের প্রতিষ্ঠান এবং আদর্শই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা নয়, একই সঙ্গে আমাদের ভবিষ্যত অবস্থান, শক্তি এবং বিশ্বে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার সক্ষমতা ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী ব্যাটলগ্রাউন্ড বলে পরিচিত রাজ্যে নির্বাচনী প্রশাসনকে বিপজ্জনকভাবে রাজনীতিকীকরণ করা হয়েছে। রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত লেজিসলেচারদের দেয়া হয়েছে অপ্রমাণিত অভিযোগ আনার ক্ষমতা। তারা ব্যালটের সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ দেয়ার চেষ্টা করেছে। দেশের সবচেয়ে মৌলিক নীতি হলো সব প্রাপ্ত বয়স্ক মার্কিন নাগরিকের আমাদের গণতন্ত্রে অংশগ্রহণের অধিকার। কিন্তু লেজিসলেটররা ফৌজদারি শাস্তি এবং জরিমানার ব্যবস্থা করেছে। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচনী কর্মকর্তা এবং নিরপেক্ষ প্রশাসকদের ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। রাজ্যের লেজিসলেটররা এমন কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন, যাতে ভোট দেয়ার পদ্ধতি খর্ব হয়। এমন পদ্ধতিকে এখন পছন্দ করছে ডেমোক্রেটিকদের দিকে ঝুঁকে থাকা কনস্টিটিউয়েন্সি।
এর মধ্যে রয়েছে আগাম ও মেইলে ভোট দেয়া। ভোটের যথার্থতা এবং মান নিশ্চিত করার বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলেছেন রিপাবলিকান আইন প্রণেতারা। এসব বিষয়ে পরিবর্তন এনে ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন অনেকে। কিন্তু অনেক বিশেষজ্ঞের মত হলো, ২০২০ সালের নির্বাচন ছিল অতি মাত্রায় সুরক্ষিত এবং জালিয়াতিমুক্ত।
কিন্তু রিপাবলিকান কিছু ভোটার এই নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এর কারণ হলো, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পসহ অনেক রিপাবলিকান নেতা ভোট জালিয়াতির মিথ্যা অভিযোগ তুলেছিলেন। তাদের সেই অভিযোগ বার বার আদালত প্রত্যাখ্যান করেছেন। এসব কারণে ২০২০ সালের নির্বাচনে রাজ্য লেজিসলেটর বা নির্দলীয় নির্বাচনী কর্মকর্তারা যা করতে ব্যর্থ হয়েছেন তা সম্পন্ন করতে।