নিউজ ডেস্ক: কিশোরগঞ্জে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজের টাকা থেকে ‘জিলাপি’ খেতে চাওয়া ইটনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনোয়ার হোসেনকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনসে যুক্ত করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) কিশোরগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ তথ্য জানা যায়। একইসঙ্গে ইটনা থানার নতুন ওসি হিসেবে মো. জাফর ইকবালকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, সোমবার (১৪ এপ্রিল) ওসির ফোনালাপ সংক্রান্ত একটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
ভাইরাল হওয়া ওই কথোপকথনে ওসি মনোয়ার হোসেনকে বলতে শোনা যায়, ‘সেফটি সিকিউরিটি দিলাম তো সারা জীবন। তোমরা যে ১৮ লাখ টাকার কাজ করে ১০ লাখ টাকা লাভ করলা, ১০ টাকার জিলাপি কিনে তো পাবলিকেরে খাওয়ালে না। খাইয়া যে একটু দোয়া কইরা দিই বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের। তোমার জায়গায় আমি হইলে সুদের ওপরে টাকা আইনা আগে জিলাপি খাওয়াইতাম। দোয়াডা হইল সবার আগে।’
অডিওতে ওসিকে আরও বলতে শোনা যায়, ‘ঠিক আছে, তাহলে জিলাপির অপেক্ষায় রইলাম, নাকি?’
এ সময় অপর পক্ষ থেকে বলতে শোনা যায়, ‘শুধু জিলাপি না, অন্য কিছু?’ ওসি বলেন, ‘না না, জিলাপি হইলেই হইব। এক প্যাঁচ, আধা প্যাঁচ (এক পিস আধা পিস) জিলাপি দিলে হইব। বিভিন্ন পারপাসে হইলে পাবলিক খাইল আর কী, বোঝ না?’ এ সময় ছাত্রনেতা বলেন, ‘বিলটিল পাই, একটা অ্যামাউন্ট দেখবনে।’ এ কথার উত্তরে ওসি বলেন, ‘ঠিক আছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওসির সঙ্গে মুঠোফোনে ওই কথোপকথনে অপর প্রান্তে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইটনা উপজেলার সংগঠক আফজাল হুসাইন ওরফে শান্ত। তিনি ইটনা সদর ইউনিয়নের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ করেছেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রনেতা আফজাল হুসাইন শান্ত বলেন, আমি ইটনা উপজেলার বলদা হাওরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৪৮০ মিটার ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ পাই টেন্ডারের মাধ্যমে। কাজ শেষ হওয়ার পর থানায় গেলে তিনি (ওসি) জিলাপি খেতে টাকা চাইতেন। তখন রেকর্ড করতে পারিনি। পরে ওসির সঙ্গে ফোনে আমার কথা হলে তিনি আমার কাছে ফসল রক্ষা বাঁধ করে যে লাভ হয়েছে, সেখান থেকে জিলাপি খেতে চান।
তিনি বলেন, আমি টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ পেয়েছি। এখানে পুলিশকে কোন কারণে জিলাপি খাওয়াতে হবে? এটা বেআইনি। আমি এই বিষয়টি জেলা পুলিশ প্রশাসনকে জানিয়েছিলাম।
ইটনা থানার প্রত্যাহার হওয়া ওসি মনোয়ার হোসেনের কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মজার ছলে জিলাপি খেতে চেয়েছিলাম। গত দুই মাস ধরে আমার সঙ্গে আফজালের কোনো কথা হয়েছে বলে মনে পড়ছে না। প্রায় দুই মাস হলো থানার পাশের মসজিদে আমার টাকায় জিলাপি বণ্টনের সময় ওর ফোন আসে। সেই সময় আমি মজার ছলে জিলাপির কথা বলেছি। এখন এতদিন পর ওই অডিও ফাঁস। বিষয়টি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মনে হচ্ছে।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী ওসি মনোয়ার হোসেনকে প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে ওসি মো. মনোয়ার হোসেনের বদলির বিষয়টি জানাজানির পর ইটনা উপজেলাজুড়ে পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।