নিউজ ডেস্ক: রাজধানীর তোপখানা রোডের একটি বাসার গৃহকর্মীকে (১২) নির্যাতনের ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। ভুক্তভোগীর বাবা গতকাল সোমবার মামলাটি দায়ের করেন। মামলার এজাহারে ভুক্তভোগীর যৌনাঙ্গে বেলন ঢুকিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন তিনি। এ ছাড়া মেয়েকে খেতে না দেওয়ার অভিযোগও করেন দায়েরকৃত মামলাটিতে।
ভুক্তভোগীর বাবার করা মামলায় গৃহকর্তা মো. তানভির আহসান পাবেল এবং তার স্ত্রী অ্যাডভোকেট নাহিদ জাহান আখিকে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা মামলার আগে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার হয়ে গত ৪ জুলাই থেকে কারাগারে রয়েছেন। তাই আজ মঙ্গলবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই, নিরস্ত্র) জাহাঙ্গীর হোসেন আসামিদের ভুক্তভোগীর বাবার দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন।
ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসিম আগামী ১৫ জুলাই আসামিদের উপস্থিতিতে গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানির তারিখ ধার্য করেছেন। একই আদালত আগামী ২ আগস্ট মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখও ধার্য করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ঠিকমত কাজ না করার অজুহাতে তানভীর আহসান পাবেল ও নাহিদ জাহান আখি বিভিন্ন কারণে-অকারণে তাদের গৃহকর্মীকে দীর্ঘদিন যাবৎ অমানবিক মারপিট করতো। গত ১ জুলাই বেলা ১১টার দিকে লাঠি দিয়ে গৃহকর্মীর হাত, পা, পিঠ ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে জখম করে। রাত ১০ টার দিকে ভুক্তভোগীর পরনের কাপড় খুলে ওড়না দিয়ে হাত বেঁধে দহনকারী ইলেকট্রিক মশা মারার ব্যাট দিয়ে তার পশ্চাৎদেশের দুই পাশে শক দিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করে। এতে গৃহকর্মীর পশ্চাৎদেশের নরম মাংস ঝলসে বিকৃত হয়।
মামলায় নির্যাতনের বর্ণনায় আরও বলা হয়, পাবেল ও নাহিদ রুটি তৈরির কাঠের বেলন দিয়ে ওই গৃহকর্মীর বাম হাতের কনুয়ের হাড় ভেঙে দেয়। ভুক্তভোগীর যৌনাঙ্গে বেলুন ঢুকিয়ে নির্যাতন করেন নাহিদ। যার ফলে সুইটির যৌনাঙ্গ বিকৃতসহ ক্ষত-বিক্ষত হয়। তার চোখে মুখে ও যৌনাঙ্গে মরিচ লাগিয়ে দেয়। ভুক্তভোগী জীবন বাঁচানোর জন্য আসামিদের বাসা থেকে পালানোর চেষ্টা করলে তাকে ভাত খেতে না দিয়ে দুই দিন বাথরুমে আটকে রেখে দেয়। গত ৩ জুলাই ভুক্তভোগী গৃহকর্মী বাথরুম থেকে বের হয়ে তাদের ঘরে থাকা বিস্কুট খেলে আসামিরা তার ওপর রাগান্বিত হয়ে রাত ১টার দিকে ফের মারপিট করে। ভুক্তভোগী জীবন বাঁচানোর জন্য কৌশলে আসামিদের বাসা থেকে পালিয়ে একজনের বাসায় আশ্রয় নেয়।
ভুক্তভোগীর বাবা মামলায় উল্লেখ করেন, তাদের বাড়ি বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন থানার নবাবপুর গ্রামে। তার অভাবের কারণে ৯ মাস আগে মেয়েকে বাসার কাজে পাঠান। তার মাসিক বেতন ধার্য করা হয় তিন হাজার টাকা। দুই মাসের বেতন মামলার বাদি নিয়ে যান। এরপর সাত মাসে আর কোনো টাকা দেয়নি আসামিরা। মেয়েকে দেখতে গেলে বা ফোনে কথা বলতে চাইলেও দেয়নি আসামিরা।
উল্লেখ্য, ভুক্তভোগী গৃহকর্মী গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় পালিয়ে আসার পর অশ্রায়দানকারী পরিবার থেকে জাতীয় জরুরি সেবায় (৯৯৯) জানানো হয়। এরপর পুলিশ ভুক্তভোগীকে গত ৩ জুলাই উদ্ধার করে। এদিন, তানভির আহসান পাবেল এবং তার স্ত্রী অ্যাডভোকেট নাহিদ জাহান আখিকে আটক করা হয়। পরদিন, অর্থাৎ গত ৪ জুলাই ৫৪ ধারায় তাদের আদালতে তোলা হলে বিচারক কারাগারে পাঠান।