নিউজ ডেস্ক: স্যার আমার খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি আমার কাছে নিয়োগ পরীক্ষার জন্য আশীর্বাদ চেয়েছিলেন। আমি তাকে ধর্ম ও প্রভূর দোহাই দিয়ে তাবিজ দিয়ে আশীর্বাদ করতে উনার শরীরে স্পর্শ করি। তখন দেখতে পাই, তিনি অসুস্থতা বোধ করছেন। কুলাউড়ায় তান্ত্রিকের তন্ত্রমন্ত্রে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ভণ্ডুল হয়ে যাওয়ার ঘটনায় আটক নৈশপ্রহরী বিপুল বিশ্বাস এমনটা বলেন। একটি তাবিজ স্পর্শ করার সাথে সাথে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেয়া আতিকুর রহমান সোহেল পড়ে যাওয়ার ঘটনাটি নিয়ে উপজেলা জুড়ে তোলপাড় চলছে। এতে শিক্ষক সোহেল অজ্ঞান হয়ে যান। এ নিয়ে হট্টগোল বাঁধে। শিক্ষককে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে।
সেই সঙ্গে স্থগিত করা হয় নিয়োগ পরীক্ষা। ঘটনাটি ঘটেছে ২৩শে জানুয়ারি শনিবার বেলা ১২টায় কুলাউড়া উপজেলার শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের শ্রীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পরীক্ষা ছিলো ২৩শে জানুয়ারি শনিবার। প্রধান শিক্ষক পদে ৫ জন প্রার্থী এবং সহকারি প্রধান শিক্ষক পদে ৪ জন প্রার্থী নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেন। নিয়োগ পরীক্ষা নিতে উপজেলা, জেলা শিক্ষা অফিসের ও ডিজি অফিসের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। বিপত্তি ঘটে নিয়োগ পরীক্ষার পূর্ব মুহূর্তে। লিখিত পরীক্ষার জন্য হলরুমে প্রবেশের মুহূর্তে স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রধান শিক্ষক পদে আবেদনকারী আতিকুর রহমান সোহেল বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরি বিপুল বিশ্বাস (৪৮) কে কুশল বিনিময় করেন। এসময় বিপুল বিশ্বাস একটি তাবিজ সোহেলের গায়ে স্পর্শ করান। সাথে সাথে সোহেল অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে পড়ে যান। বেঁধে যায় হুলুস্থুল কাণ্ড। প্রধান শিক্ষক পদে পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা সোহেলকে উদ্ধার করে প্রথমে ব্রাহ্মণবাজারের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে এবং পরবর্তীতে তাকে সিলেট ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি ওই হাসপাতালের আইসিইউতে আছেন বলে তাঁর ভাই ফয়জুর রহমান ছুরুক জানান। ক্ষুব্ধ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যরা নৈশ প্রহরি বিপুল বিশ্বাসকে গণধোলাই দিয়ে বাথরুমে আটকে রাখে। খবর পেয়ে কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ বিনয় ভূষণ রায় ঘটনাস্থলে গিয়ে আটক বিপুল বিশ্বাসকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। আটক বিপুল বিশ্বাস জানান, সোহেল স্যার আমার খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি আমার কাছে নিয়োগ পরীক্ষার জন্য আশীর্বাদ চেয়েছিলেন। আমি তাকে ধর্ম ও প্রভূর দোহাই দিয়ে তাবিজ দিয়ে আশীর্বাদ করতে উনার শরীরে স্পর্শ করি। তখন দেখতে পাই, তিনি অসুস্থতা বোধ করছেন। আমি কোন খারাপ উদ্দেশ্যে কিছু করিনি।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম খান বাচ্চু জানান, আমার সামনে এই ঘটনাটি ঘটে। প্রধান শিক্ষক পদে পরীক্ষা দিতে আসা আতিকুর রহমান সোহেল আমাকে মাথা ঘুরানোর কথা বলেই পড়ে যান। তখন তাকে উদ্ধার করে আমরা হাসপাতালে পাঠাই। কুলাউড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আনোয়ার জানান, পরিস্থিতি ঘোলাটে হওয়ায় আপাতত শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুনরায় শিক্ষক নিয়োগ করা হবে।