বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জি এম আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, ডলারের কিছুটা সংকট থাকলেও এলসি খোলা বন্ধের কোনো নির্দেশনা দেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো প্রতিদিনই বাণিজ্যিক ঋণপত্র (এলসি) খুলছে। তবে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। সক্ষমতা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো পণ্যের বিপরিতে এলসি খুলছে। বাজারের চাহিদা মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিত ডলার সরবরাহ করছে। ভবিষ্যতেও করবে।
সোমবার সমসাময়িক বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ডাকা এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব বলেন।
আবুল কালাম আজাদ জানান, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু এলসি বন্ধ করেছে। কারণ এলসির সময় আন্ডার এনভয়েসিং (পণ্যের দাম কম দেখানো) ও ওভার ইন ভয়েসিং (দাম বেশি দেখানো) হচ্ছে। এটি অপরাধ হওয়ায় কিছু কিছু এলসি বন্ধ করা হয়েছে। তবে অন্য এলসি করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো বিধিনিষেধ নেই। পণ্য আমদানিতে ২০ থেকে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত দাম কম বেশি দেখানো হচ্ছে। এটি বন্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
উল্লেখ্য, কম শুল্ক দিয়ে পণ্য আমদানির জন্য ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ আন্ডার এনভয়েসিং বা পণ্যের দাম কম দেখিয়ে থাকেন। আর অর্থপাচারের ক্ষেত্রে ওভার ইন ভয়েসিং বা পণ্যের দাম বেশি দেখানো বিষয়টি ব্যবহার করে তারা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ষড়যন্ত্রমূলক খবর প্রচারিত হচ্ছে। সেখানে বিনিয়োগকারীদের ব্যাংকের আমানত তুলে নেয়ার জন্য বলা হচ্ছে। ব্যাংকগুলোতে নগদ অর্থ নেই বা তারল্য সংকট আছে বলে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। কিন্তু এটি সত্য নয়। বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা অত্যন্ত সুদঢ় অবস্থায় রয়েছে। ব্যাংকিং ব্যবস্থায় তারল্যের কোনো সংকট নেই। ব্যাংক ব্যবস্থায় বর্তমানে এক লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকার অতিরিক্ত তারল্য রয়েছে।
তিনি বলেন, তারল্য পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকের সব ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাছে বিশেষ সতর্ক বার্তা দিয়েছে। কোনো ব্যাংকের তারল্য ব্যবস্থাপনায় কোনো ব্যত্যয় থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংক তা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নিরসন করার পদক্ষেপ নেবে। তারল্য ব্যবস্থাপনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘রেপো ও অ্যাসিউরড লিকুইডিটি সাপোর্ট’ নীতি সর্বদা চালু রয়েছে। ব্যাংকের পরিদর্শন ও সুপারভিশন বিভাগ ব্যাপকভাবে তৎপর রয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫১ বছরে কোনো ব্যাংক বন্ধ হয়নি। আশা করা যায় আগামীতেও বাংলাদেশের কোনো ব্যাংক বন্ধ হবে না। ব্যাংকগুলোতে জনগণের আমানত সম্পূর্ণ নিরাপদ রয়েছে। ব্যাংকে জনগণের সংরক্ষিত আমানত নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু ঘটেনি।
তিনি বলেন, যদিও বাকি বা দেরিতে পরিশোধের শর্তে আগে খোলা এলসির দায় পরিশোধ বেড়েছে। যে কারণে বৈদেশিক মুদ্রার খরচ কমেনি। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে এলসি খোলা ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ কমলেও আমদানির দায় পরিশোধ বেড়েছে ১১ দশমিক ৭০ শতাংশ। এর কারণ, এলসি খোলার সঙ্গে সঙ্গে কোনো পণ্য আমদানি হয় না। বেশিরভাগ এলসির দেনা পরিশোধ হয় পণ্য দেশে আসার পর। অবশ্য সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশিরভাগ আমদানি হচ্ছে বায়ার্স ক্রেডিট বা ডেভার্ড পেমেন্টের মাধ্যমে। এ উপায়ে পণ্য পাওয়ার পর নির্ধারিত সময় শেষে এলসির দায় পরিশোধ করতে হয়।
ব্যবসায়ীরা জানান, আমদানি কমাতে শতভাগ এলসি মার্জিন নির্ধারণের পাশাপাশি এলসি খোলার আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনাপত্তি নিতে হচ্ছে। সব ঠিক থাকার পরও কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক বলে দিচ্ছে, এ এলসি খোলা যাবে না। বিশেষ করে গাড়ি, টিভি, ফ্রিজ, ফুল, ফলের মতো পণ্য আমদানিতে অনেক ক্ষেত্রে অনাপত্তি দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেননা, এ ধরনের পণ্যের এলসি খোলার খুব কম দিনের মধ্যে পণ্য এসে যায়। দায় পরিশোধও করতে হয় দ্রুততম সময়ে। এসব পণ্যের বাইরে অন্য যেকোনো ক্ষেত্রে ডলার সংস্থান না করে এলসি না খোলার বিষয়ে সতর্ক করা হচ্ছে। ফলে এখন রপ্তানি আয়ের বিপরীতে ব্যাক টু ব্যাকের বাইরে এলসি হচ্ছে খুব কম। অধিকাংশ ব্যাংক এখন এলসি খোলার আগে আমদানিকারককে ডলার সংগ্রহ করার শর্ত দিচ্ছে। আর আগের দায় পরিশোধে দফায় দফায় সময় নিচ্ছে। আমদানি নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে নতুন এলসি কমছে।