সাবিনা ইয়াসমীন-
বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে—বাণিজ্যের ধরন বদলাচ্ছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রযুক্তি ভূমিকা বাড়ছে, এবং বিশ্ববাজারের সাথে বাংলাদেশের ব্যবসা ক্রমই জুড়ে যাচ্ছে ডিজিটাল মাধ্যমে। এই বাস্তবতায় এখন এফবিসিসিআই–এর সামনে একটি সময়োপযোগী চ্যালেঞ্জ—
একটি আদর্শ ট্রেড–অর্গানাইজেশন থেকে একটি ডেটা–চালিত ডিজিটাল বিজনেস প্ল্যাটফর্মে উত্তরণ।এটি কোনো ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি নয়—এটি সময়ের দাবি। এটি কোনো প্রার্থীর এজেন্ডা নয়—এটি দেশীয় ব্যবসার ভবিষ্যৎ।
১. একটি জাতীয় ট্রেড ডেটাবেজের প্রয়োজনীয়তা
তথ্য এখন ব্যবসার সবচেয়ে বড় সম্পদ। কিন্তু অনেক ব্যবসায়ী এখনও জানেন না—কোথায় তাদের পণ্যের চাহিদা আছে, কে তাদের সম্ভাব্য ক্রেতা, কোন সেক্টরে কত বিনিয়োগ হচ্ছে।
একটি জাতীয় ট্রেড ডেটাবেজ—
পণ্যভিত্তিক ব্যবসার সম্ভাবনা দেখাবে
রপ্তানি ও আমদানির ডেটা বিশ্লেষণ করবে
ব্যবসায়ীদের মধ্যে তথ্য–নির্ভর সংযোগ তৈরি করবে
দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সহায়ক হবে
এই প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের ব্যবসাকে অপারেট করবে অন্ধভাবে নয়—বরং তথ্যভিত্তিক আত্মবিশ্বাস নিয়ে।
২. মেম্বার–টু–মেম্বার বিজনেস ম্যাচিং—দেশীয় বাণিজ্যে এক নতুন সম্ভাবনা
এফবিসিসিআই–এর সদস্যরাই এই প্রতিষ্ঠানের প্রাণশক্তি। তাদের মধ্যে যদি ব্যবসায়িক যোগাযোগ বাড়ে— তাহলে বিদেশে ট্রেড পার্টনার খোঁজার আগেই দেশের ভেতরে বৃহত্তর বাজার তৈরি হবে। একটি ডিজিটাল বিজনেস ম্যাচিং সিস্টেম—
একই সেক্টরের কোম্পানিকে সংযুক্ত করবে
সম্ভাব্য ক্রেতা ও সরবরাহকারীর মিল খুঁজে দেবে
বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করবে
B2B লেনদেন সহজ করবে
এটি নেটওয়ার্কিং নয়—এটি বাস্তব বাণিজ্যিক প্রবাহ।
৩. নীতিনির্ধারণে বিগডাটা—যেখানে প্রমাণই কথা বলে
নীতিগত সুপারিশ যদি বাস্তব ব্যবসায়িক ডেটার ওপর দাঁড়ায়— তবে নীতির কার্যকারিতা বহুগুণ বাড়ে।
ডেটা–অ্যানালিটিক্সের মাধ্যমে—
কোন সেক্টরে সমস্যা
কোথায় সুযোগ
কোন নীতিতে বাধা
কর কাঠামোতে প্রভাব—এসব পরিষ্কার বোঝা যাবে। এফবিসিসিআই তখন নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখবে একজন মতামতদাতা হিসেবে নয়—বরং একজন ডেটা–ড্রিভেন থিংক–ট্যাঙ্ক হিসেবে।
৪. ভার্চুয়াল সহযোগিতা—ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতার অবসান
বিশ্বে এখন দূরত্ব মানে কিছুই নয়—সংযোগই সব।
একটি ভার্চুয়াল ট্রেড–সহযোগিতা প্ল্যাটফর্ম—
লাইভ অনলাইন বিজনেস মিটিং ,ডকুমেন্ট শেয়ারিং,
ডিজিটাল কন্ট্রাক্ট,
আন্তর্জাতিক B2B আলোচনা —এগুলোর সুযোগ দেবে।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট নয়—বাংলাদেশের ব্যবসা সরাসরি সংযুক্ত হবে দুবাই, ইস্তাম্বুল, সিঙ্গাপুর, লন্ডন এবং নিউইয়র্কের সাথে।
৫. এটি ব্যক্তির অভিলাষ নয়—ব্যবসার প্রয়োজন
বাংলাদেশের বাণিজ্যের পরবর্তী অধ্যায় ডিজিটাল। এফবিসিসিআই–এর পরবর্তী রূপ হবে—
তথ্যসমৃদ্ধ
প্রযুক্তি–সক্ষম
দ্রুত প্রতিক্রিয়াশীল
ব্যবসাবান্ধব
আন্তর্জাতিকভাবে সংযুক্ত
এটি কাউকে বড় করার স্বার্থ নয়—এটি বাংলাদেশের ব্যবসায়িক ভবিষ্যৎকে শক্তিশালী করার দায়িত্ব।প্রথাগত মডেল আমাদের এতদূর নিয়ে এসেছে—কিন্তু ভবিষ্যতে যেতে হলে প্রয়োজন নতুন সক্ষমতা। ট্রেড ডেটাবেজ, বিজনেস ম্যাচিং, বিগডাটা অ্যানালিটিক্স ও ভার্চুয়াল কানেক্টিভিটি— এই চারটি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়েই এফবিসিসিআই হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের ডিজিটাল ট্রেড–এক্সিলারেশন হাব।এখন সময় সিদ্ধান্তের—
এফবিসিসিআই কি তার পুরনো গতিতে এগোবে, নাকি আগামী দশকের ট্রেড–রিয়্যালিটির সাথে নিজেকে মানিয়ে নেবে? সময় বলে দিচ্ছে—
ডিজিটাল যাত্রাই আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ।
এই প্রস্তাবগুলো কোনো ব্যক্তির নয় — বরং আমাদের সম্মিলিত অভিজ্ঞতা ও সময়ের প্রেক্ষাপট থেকে উঠে আসা ভাবনা। এ নিয়ে সবার মতামত ও constructive পরামর্শকে আমরা স্বাগত জানাই, কারণ এফবিসিসিআই আমাদের সবার — এর ভবিষ্যৎও আমাদের যৌথ দায়িত্ব।
সাবিনা ইয়াসমীন
ম্যানেজিং ডিরেক্টর, প্রচিত আইটিএস লিমিটেড
ডিরেক্টর পদপ্রার্থী, এফবিসিসিআই