নিউজ ডেস্ক: অস্ত্র ও মাদক আইনের মামলায় সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম ও তার দেহরক্ষী মো. জাহিদের পাঁচ দিন করে রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। রোববার শুনানি শেষে ঢাকার পৃথক দুই মহানগর হাকিম আসামিদের রিমান্ডের এ আদেশ দেন।
পাঁচ দিনের মধ্যে ইরফান সেলিমের বিরুদ্ধে করা অস্ত্র মামলায় তিনদিন ও মাদক আইনের মামলায় দুদিনের রিমান্ডর আদেশ দেয়া হয়েছে। জাহিদের বিরুদ্ধে করা পৃথক দুই মামলার মধ্যে অস্ত্র মামলায় তিনদিন ও মাদক আইনের মামলায় দুইদিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
গত ২৯ অক্টোবর রাজধানীর চকবাজার থানায় করা অস্ত্র ও মাদক আইনের পৃথক চার মামলায় সাত দিন করে মোট ২৮ দিনের রিমান্ডের এ আবেদন করা হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকতা চকবাজার থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন এ আবেদন করেন। এরমধ্যে ইরফানের দুই মামলায় সাত দিন করে মোট ১৪ দিন এবং জাহিদের দুই মামলায় সাত দিন করে ১৪ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। ওই সময় আসামিরা নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধারের মামলায় রিমান্ডে থাকায় এ মামলাগুলোর রিমান্ড শুনানি হয়নি। এসব মামলার রিমান্ড শুনানির জন্য পরবতীতে আদালত এদিন ধার্য করেন।
এদিন বেলা ১১টার দিকে আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। প্রথমে পৃথক দুই হাকিম আদালতে অস্ত্র ও মাদক মামলা আসামিদের গ্রেফতার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। এরপর অপর দুই হাকিম আদালতে অস্ত্র ও মাদক মামলার রিমান্ড শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আসামিপক্ষে আইনজীবী শ্রী প্রাণনাথ দুই মামলায় রিমান্ড বাতিল চেয়ে শুনানি করেন।
মাদক মামলার শুনানিতে তিনি বলেন, মদপ্য অবস্থায় থাকায় ও মাদক পাওয়ায় তাকে (ইরফান সেলিম) সাজা দেয়া হয়েছে। এরপরও নতুন করে মাদক মামলায় রিমান্ডে নেয়ার কোনো যৌক্তিকতা নাই।
আর অস্ত্র মামলার শুনানিতে তিনি বলেন, ঘটনার সময় ‘নলেজ, পজিশন ও পাওয়ার’ এর কোনোটিই আসামির ছিল না। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা হলেও মাদক ও অস্ত্র উদ্ধারে জব্দ তালিকায় ওই ম্যাজিস্ট্রেটের স্বাক্ষর নেই।
অপরদিকে দুই মামলার রিমান্ড শুনানিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি মো. আব্দুল্লাহ আবু বলেন, আসামিদের কাছ থেকে মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। এসবের সঙ্গে আর কারা কারা জড়িত, এর নেপথ্যে আরও কেউ আছে কিনা তা জানার জন্য আসামিদের রিমান্ডে নেয়া একান্ত প্রয়োজন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে পৃথক দুই আদালত আসামিদের রিমান্ডের ওই আদেশ দেন।
এর আগে নৌবাহিনীর এক কর্মকর্তাকে মারধরের মামলায় দুই দফায় রিমান্ড শেষে গত ৪ নভেম্বর ইরফান সেলিমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। একইদিন দেহরক্ষী জাহিদ এ মামলায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দি রেকর্ড শেষে আদালত তাকেও কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গত ১ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় দুই দিনের এবং এরও আগে গত ২৮ অক্টোবর প্রথম দফায় ইরফান সেলিম ও জাহিদকে তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন আদালত। মামলায় রিমান্ড শেষে ইরফান সেলিমের সহযোগী এবি সিদ্দিকী দিপু এবং হাজী সেলিমের গাড়িচালক মো. মিজানুর রহমান খান কারাগারে আছেন।
গত ২৬ অক্টোবর রাজধানীর ধানমণ্ডি থানায় মামলাটি করা হয়। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঘাটি হাজী মহসীনে কর্মরত লেফটেন্যান্ট ওয়াসিফ আহমদ খান বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় সংসদ সদস্য হাজী মো. সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিম, এবি সিদ্দিক দিপু, মো. জাহিদ ও মো. মিজানুর রহমানসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২/৩ জনকে আসামি করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ অক্টোবর রাজধানীর চকবাজারে হাজী সেলিমের বাসায় অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অভিযানকালে র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত মাদক রাখার দায়ে ইরফান সেলিমকে এক বছর কারাদণ্ড দেন। আর অবৈধ ওয়াকিটকি রাখার দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন।
দুই মামলায় মোট দেড় বছরের সাজা দেয়া হয় তাকে। ইরফানের দেহরক্ষী মো. জাহিদকে ওয়াকিটকি বহন করার দায়ে ছয় মাসের সাজা দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ওই অভিযানে অস্ত্র, ইয়াবা, বিদেশী মদ, ৩৮টি ওয়াকিটকি ও অন্যান্য সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় রাজধানীর চকবাজার থানায় ইরফান ও জাহিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে পৃথক দুটি করে মোট চারটি মামলা হয়।