ইরান-ইসরায়েলের ১২ দিনের যুদ্ধকে ‘ইরানের বিজয়’ বলে অভিহিত করায় দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির কড়া সমালোচনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ‘তার (খামেনি) মৃত্যু আমি ঠেকিয়েছি’ উল্লেখ করে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ইরান যদি পারমাণবিক কর্মসূচি পুনরায় শুরু করে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ‘নিশ্চিতভাবেই’ দেশটিতে আবার বোমা হামলা চালাবে।
শুক্রবার (২৭ জুন) ট্রুথ সোশালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, তিনি খামেনিকে ‘ভয়াবহ ও লজ্জাজনক মৃত্যু’ থেকে রক্ষা করেছিলেন। কিন্তু খামেনি এখন যুদ্ধজয় নিয়ে ‘মিথ্যা’ দাবি করছেন। খবর আলজাজিরার।
তিনি লেখেন, “তার দেশ ধ্বংস হয়ে গেছে, তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা সম্পূর্ণ গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি জানতাম তিনি কোথায় লুকিয়ে ছিলেন। তবুও আমি ইসরায়েল ও বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী মার্কিন সেনাবাহিনীকে তার জীবন শেষ করতে দেইনি।”
ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতির পর এটিই ছিল ট্রাম্পের প্রথম বড় প্রতিক্রিয়া।
ইসরাইলের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধের পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে খামেনি বলেছিলেন, “মার্কিন সরকার যুদ্ধে সরাসরি জড়িত হয়েছিল। কারণ তারা বুঝতে পেরেছিল যদি হস্তক্ষেপ না করে তাহলে ইহুদিবাদীদের পতন ঘটবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসন কোনো কিছু অর্জন করেনি।এখানে বিজয়ী হয়েছে ইরান এবং আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে চূড়ান্ত আঘাত করেছি। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জয় পাওয়ায় আমি সবাইকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।”
ইরানের বিরুদ্ধে যদি কেউ আবারও আগ্রাসন চালানোর চেষ্টা করে তাহলে সেজন্য চড়া মূল্য দিতে হবে বলেও হঁশিয়ারি দেন দেশটির এই সর্বোচ্চ নেতা।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের এক ফাঁস হওয়া গোয়েন্দা প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, মার্কিন হামলায় ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা মাত্র কয়েক মাসের জন্য ব্যাহত হয়েছে, ধ্বংস হয়নি—যা ট্রাম্পের বক্তব্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
ট্রাম্প আরো জানান, খামেনির ‘ঘৃণা, ক্রোধ ও ধ্বংসাত্মক ভাষ্যর’ কারণে তিনি ইরানের উপর থেকে আংশিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেছেন, যা ইরানের দ্রুত পুনরুদ্ধারের একটি সুযোগ দিতে পারত।
একদিন আগে হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তেহরানের পরমাণু অস্ত্র তৈরির আকাঙ্ক্ষা যদি দমানো না যায়, তাহলে তিনি নতুন করে হামলার কথা বিবেচনা করবেন কি না? মার্কিন প্রেসিডেন্ট দ্রুত জবাব দেন, “অবশ্যই। এটি প্রশ্নাতীত।”
তিনি জানান, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা অথবা অন্য কোনো গ্রহণযোগ্য সংস্থার পরিদর্শকরা যেন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো পরিদর্শনের সুযোগ পান, সেটি তিনি চান। কিন্তু এরই মধ্যে ইরান একটি বিল অনুমোদন করেছে, যাতে আইএইএর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করা হয়েছে।
তেহরান হয়তো আইএইএর নতুন কোনো পরিদর্শন অনুরোধ গ্রহণ করবে না বলে শুক্রবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইঙ্গিত দেন।
তিনি বলেন, “ইরান তার স্বার্থ, জনগণ ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রয়োজনীয় যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার রাখে।”