1. ph.jayed@gmail.com : akothadesk42 :
  2. admin@amaderkatha24.com : kamader42 :
শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ০৮:৫০ পূর্বাহ্ন

যেসব কারণে ব্রয়লার মুরগির দাম বৃদ্ধি

আমাদের কথা ডেস্ক
  • আপডেট : রবিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২১

নিউজ ডেস্ক: এক সময়ের সহজলভ্য প্রোটিনের উৎস ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ধীরে ধীরে তা নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্তের সাধ্যের বাইরে যাচ্ছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে দাম বেড়েছে ব্রয়লারের। চলতি সপ্তাহেও কেজিতে ৫-১০ টাকা বেড়ে রাজধানীর বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা পর্যন্ত। অথচ দুই মাস আগেই এই দাম ছিল ১২৫-১৩০ টাকা। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, এক মাসের ব্যবধানে দাম ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং এক বছরের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম ৩৪ দশমিক ৬২ শতাংশ বেড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লকডাউন-বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার পর হোটেল, রেস্তোরাঁ, মেস, হোস্টেল, বিয়ে-শাদি, সামাজিক অনুষ্ঠানসহ সব কিছু আবারও স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। এতে কয়েক মাস ধরে ব্রয়লার মুরগির চাহিদা ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। কিন্তু সেই তুলনায় বাজারে সরবরাহ অনেক কম। এর পেছনে করোনাজনিত আর্থিক সংকটে প্রান্তিক পর্যায়ে খামার বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং পোলট্রি খাবারের দাম বেড়ে যাওয়াকে দায়ী করছেন তারা। অন্যদিকে বাচ্চার দামও বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। ফলে বাজারে তার প্রভাব পড়েছে।

মালিবাগ বাজারের মুরগি ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন বলেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে কাপ্তান বাজারে পাইকারি দাম বেড়ে চলেছে। মুরগি আমদানি কম হওয়ায় ইদানীং বিক্রিও জলদি শেষ হয়ে যাচ্ছে। দেরিতে গেলে মুরগি পাওয়া যাচ্ছে না। আজ (শনিবার) ভোরে আমাদেরই এক হাত বদল হয়ে ব্রয়লার কিনতে হয়েছে ১৭০-১৭৩ টাকা কেজি দরে।

বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য বলছে, করোনা ধাক্কা সামলাতে না পেরে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত সারাদেশে ২৭ হাজার ৮০০ খামারি তাদের ব্রয়লার মুরগির খামার বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। এ ছাড়া সোনালি, লেয়ার ও হাঁসের খামারিদের হিসাব যোগ করলে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার অবকাঠামো এখন অলস পড়ে রয়েছে। ফলে উৎপাদন কমেছে। অন্যদিকে পোলট্রি ফিড ও বাচ্চার দাম বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে উৎপাদন খরচ।

নোয়াখালীর উত্তর সাহাপুরের তরুণ উদ্যোক্তা তারেক পোলট্রির আমির-উল-ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, ‘করোনাকালে আমার দ্ুিট খামার বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে একটি চালু রয়েছে। লকডাউনের সময় ফিড ও বাচ্চার দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচও বেড়ে যায়। কিন্তু সে তুলনায় মুরগির দাম পাচ্ছিলাম না। তাই বন্ধ করে দিয়েছি। বর্তমানে একটি খামার চালু রয়েছে। সেখানে চার হাজার ব্রয়লার রয়েছে এখন। খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ায় এখন আর বেশি মুরগি তুলতে পারছি না। বাচ্চার দামও দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে।’

সিলেটের সুনামগঞ্জের বোরহান পোলট্রি ফার্মের উদ্যোক্তা বোরহানউদ্দিন জানান, তাকে এখন একদিনের ব্রয়লার মুরগির বাচ্চা কিনতে হচ্ছে ৫৪-৫৬ টাকা পর্যন্ত করে। অথচ পাঁচ মাস আগেই পাওয়া গেছে ২০-২৬ টাকায়। আর ২০২০ সালের শুরুতে বাচ্চা মিলেছে ১৩-১৫ টাকায়। তা ছাড়া ফিডের দাম বেড়ে যাওয়ায় খামারিদের চাপ বেড়েছে।

প্রাণী খাদ্য প্রস্তুতকারী শিল্পের সংগঠন ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের (ফিয়াব) সাধারণ সম্পাদক আহসানুজ্জামান বলেন, একদিকে দাম বৃদ্ধি, অন্যদিকে কাঁচামালের সংকট। এ দুটি চাপে ফিড উৎপাদনকারীরা সংকটে পড়েছেন। এতে মাঝারি ও ছোট ইন্ডাস্ট্রিগুলোর টিকে থাকাই দায় হয়ে পড়ছে। কারণ কাঁচামালের দাম যেভাবে বাড়ছে ফিডের দাম সে হারে বাড়ানো যাচ্ছে না। ফিডের দাম যেটুকু বেড়েছে তার প্রভাবে মাছ, মুরগি, ডিমের দাম বাড়তে শুরু করেছে।

তিনি আরও বলেন, প্রাণী খাদ্যের প্রধান দুটি উপাদান ভুট্টা ও সয়াবিন মিল। খাদ্যে কাঁচামাল হিসেবে ২০-২৫ শতাংশ পর্যন্ত সয়াবিন মিল ব্যবহার করা হয়। মাঝে সরকার সয়ামিল রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিলে বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। যদিও সরকার রপ্তানির সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। এ জন্য আমরা স্বস্তিও প্রকাশ করেছি। এতে সয়ামিলের দাম কমে আসবে বলে আশা করছি।

গাজীপুরের প্রোটিন হাউসের উদ্যোক্তা আমিনুল রহমান বলেন, ‘পোলট্রি ফিডের প্রতিবস্তা (৫০ কেজি) এখন কিনতে হচ্ছে দুই হাজার ৭০০ টাকায়। ২০২০-এর মাঝামাঝি যা এক হাজার ৮৫০ টাকায় কেনা গেছে। কাঁচামালের সংকট ও দাম বাড়ার কারণ দেখিয়ে ফিডের দাম বাড়ানো অযৌক্তিক। কারণ একটি নির্দিষ্ট মৌসুমে ভুট্টা, গমসহ অন্যান্য কাঁচামাল একবারে সংগ্রহ করে থাকে ফিড কোম্পানিগুলো। একদামেই কাঁচামালগুলো সংগ্রহ করে তারা। পরবর্তী সময় খুচরা বাজারের দাম বাড়লেও তাদের উৎপাদন খরচ বাড়ে না। সুতরাং বাজার বুঝে দাম বাড়ানো কারসাজি ছাড়া আর কিছু না।’

বাজারে দাম বাড়লেও খামারিরা মুরগির দাম পাচ্ছেন না উল্লেখ করে বাংলাদেশ পোলট্রি শিল্প ফোরামের প্রধান সমন্বয়ক চাষি মামুন আমাদের সময়কে বলেন, খামারে মুরগির দাম রোজ রোজ বাড়ে না। পরিস্থিতির কারণে বাড়লেও সময় লাগে। কিন্তু বাজারে গেলে দেখা যায় প্রতিসপ্তাহেই বাড়ছে। খামারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকায়। অথচ রাজধানীতে এসে সেই মুরগি ৪০ টাকা দাম বেড়ে যাচ্ছে। খামারিদের রক্ষার্থে এ টাকা কাদের পকেটে যায়, তা খুঁজে বের করতে হবে। এক শ্রেণির মধ্যস্বত্বভোগীরা ফোনে ফোনে মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছেন। সেই দামে খামার থেকে মুরগি সংগ্রহ করে পাইকারদের সরবরাহ করছেন। এই সিন্ডিকেট না ভাঙলে দাম অসহনীয় পর্যায়ে থাকবে, খামারিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই জাতীয় আরো খবর
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Maintained By Macrosys