নিউজ ডেস্ক: অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও সমন্বয়হীনতার অভিযোগ তুলে সংসদে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের অপসারণ দাবি করেছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা) ও বিএনপির সংসদ সদস্যরা। জাহিদ মালেককে এ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী করার দাবিও উঠেছে।
গতকাল মঙ্গলবার নতুন অর্থবছরের বাজেটের মঞ্জুরি দাবি ও ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করেন কয়েকজন সংসদ সদস্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ সময় সংসদে উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীও। এদিন ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটও পাস হয়।
আইন মন্ত্রণালয়ের ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় জাপা সাংসদ কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘সবকিছু যদি প্রধানমন্ত্রীরই করতে হয়, তাহলে মন্ত্রণালয়-অধিদপ্তর এত রাখার তো দরকার নেই। এত টাকা খরচ করে লাভ কী? আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাই অনুসরণ করব। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কোনো সমন্বয় নেই। দেখা যায়, অধিদপ্তরের সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানেনও না।’ তিনি বেসরকারি হাসপাতালগুলো অধিগ্রহণ করে কভিড ও নন-কভিড দুটি সেকশনে আলাদা করে ফেলার প্রস্তাব দেন।
জাপার আরেক সাংসদ মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘নি¤œমানের পিপিই দেওয়ার কারণে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন। নি¤œমানের স্বাস্থ্যসামগ্রী দেওয়ার জন্য দেখলাম দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে যারা মারা গেছেন তাদের কী জবাব দেবেন?’
জাপার পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ডাক্তারদের খাবার বিল নিয়ে সংসদে কথা বলেছেন। সেখানে একটি কলার দাম দুই হাজার টাকা, একটি ডিমের দাম এক হাজার টাকা। একটি ব্রেডের এক স্লাইসের দাম তিন হাজার টাকা, দুই স্লাইস ছয় হাজার টাকা। করোনাকালেও স্বাস্থ্য খাতে এ অবস্থা।’ কদিন আগে জিম্বাবুয়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী পিপিই ও কিট কেনায় দুর্নীতির দায়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মানুষ বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মীনা কার্টুনের টিয়া পাখি মিঠুর মতো। মিঠু ঘুরে ঘুরে বেড়ায় আর মীনা চলতে থাকে। টিয়া পাখি দ্বারা চলছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।’ ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অন্য কোনো দায়িত্ব দিয়ে সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীকে দেওয়ার জন্য লোকে বলে। মানুষের কথাটা নিবেদন করলাম’ তিনি যোগ করেন।
জাপার আরেক সাংসদ শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য খারাপ, এতে কোনো সন্দেহ নেই। স্বাস্থ্যমন্ত্রীরও চিকিৎসা প্রয়োজন। একটা ডিজরাপটিভ ইন্টারভেনশন দরকার।’ জাপার রওশন আরা মান্নান স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি, করোনাভাইরাস মহামারী নিয়ে মন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেন।
বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য। সুচিকিৎসার পূর্বশর্ত সঠিক রোগনির্ণয়। কিন্তু টেকনোলজিস্টদের সংখ্যা এত সীমিত! ২৪ ঘণ্টা পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে গরিব-সাধারণ মানুষ সেবা পাবে।’ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের সমন্বয়হীনতা কাটাতে দ্রুত সংস্কার চান তিনি। এর আগে বিএনপির এই সাংসদ সংসদে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি তুলেছিলেন।
সাংসদদের অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আইসিইউ নিয়ে অনেক কথা হলো। ভেন্টিলেটর নিয়ে বিরাট হইচই। কিন্তু দেখা গেছে, ভেন্টিলেটরের কোনো প্রয়োজনই নেই। ভেন্টিলেটরের যারা গেছেন তাদের প্রায় সবাই মৃত্যুবরণ করেছেন। আমাদের ৪০০ ভেন্টিলেটর আছে। এর মধ্যে ৫০টিও ব্যবহার হয়নি। ৩৫০ ভেন্টিলেটর খালি পড়ে আছে। কারণ তখন মানুষ এটা জানত না।’ করোনা চিকিৎসার ওষুধ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বারবার তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে বলে অভিযোগ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘সংসদ সদস্যরা সংসদে আমাদের শুধু দোষারোপ করে গেছেন। আমরা কী কাজ করেছি, তা আসেনি তাদের বক্তব্যে। কভিড আসার শুরু থেকেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’ সমন্বয়হীনতার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কোনো সমন্বয়হীনতা নেই। পাঁচ মাস কিন্তু আমরাই মাঠে আছি। ২৫ দিনে বসুন্ধরায় দুই হাজার বেডের হাসপাতাল বানিয়েছি। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। সবার সহযোগিতা পেলে কভিড চলে যাবে। স্বাভাবিকভাবে অর্থনীতি এগিয়ে যাবে।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা সম্পর্কিত চিকিৎসকদের থাকা-খাওয়ার বিষয়ে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তা সঠিক নয় বলে দাবি করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেল কলেজের থাকা-খাওয়ার বিষয় নিয়ে যে কথা হয়েছে, আমি খোঁজ নিয়েছি। কাল (সোমবার) রাতে আমি এটা দেখেছি। ৫০টি হোটেল ভাড়া হয়েছে। সেখানে ৩ হাজার ৭০০ মানুষ এক মাস থেকেছে। প্রত্যেকটি রুমের ভাড়া ১ হাজার ১০০ টাকা। খাওয়ার খরচ যেটা বলা হয়েছে তা টোট্যালি রং। সেখানে দিনের তিনটি মিলের জন্য খরচ ৫০০ টাকা হয়েছে।’