নিউজ ডেস্ক: ফরাসি সিনেটর সেন্ডি তাল আরিক’র আমন্ত্রণে ফ্রান্স প্রবাসী বাংলাদেশিদের একটি প্রতিনিধি দল ফ্রান্সের উচ্চকক্ষ সিনেট পরিদর্শন করেন। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন ফ্রান্স- বাংলাদেশ বিজনেস ফোরামের সভাপতি সাত্তার আলী সুমন (শাহ আলম)।
প্যারিসের প্যালিস দু লুক্সেমবার্গ (Palais du Luxembourg) নামে পরিচিত এই সিনেট ভবন পরিদর্শন করেন তারা। এটি একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা যা লুক্সেমবার্গ গার্ডেনের পাশে অবস্থিত ।
গত শুক্রবার (৩ মে) বিকেল তিনটায় তারা সিনেট ভবন পরিদর্শনে যান। এ সময় সিনেটর এর দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা তাদেরকে স্বাগত জানান ও ঘুরে ঘুরে সিনেট ভবনের বিভিন্ন তলায় অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক স্থাপনা গুলোর ইতিহাস তুলে ধরেন।
সিনেট বিষয়ে তথ্য জানাতে গিয়ে প্রতিনিধি দলকে তিনি জানান- এটি নির্মিত হয় ১৬১৫ সালে এবং সম্পন্ন হয় ১৬৩১ সালে ।
যুগের পর যুগ এটি কয়েকজন রাজার কর্তৃত্বে ছিল। ফরাসি বিপ্লবের সময় এই ভবনটি কারাগার হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
সিনেট ভবনের মধ্যে কনফারেন্স হল, লাইব্রেরি সিনেটদের জন্য জন্য আলাদা বসার জায়গা, এসকালীয় দূ অনার বা সম্মানীয় সিঁড়ি, ভাস্কর্য গ্যালারি রয়েছে।
উল্লেখ্য ফ্রান্সের সংসদীয় ব্যবস্থা দুটি স্তম্ভের উপর ভিত্তি করে গঠিত: একটি নিম্ন কক্ষ বা জাতীয় সংসদ অন্যটি সিনেট বা উচ্চকক্ষ। প্রথমটি সরাসরি জনগণের ভোটের দ্বারা নির্বাচিত হয় আর দ্বিতীয়টি বা সিনেট সংসদ সদস্যদের দ্বারা নির্বাচন করা হয়।
সিনেটর সদস্য সংখ্যা ৩৪৮ জন এবং ৬ বছরের জন্য তারা নির্বাচিত হয়ে থাকেন।
তাদের কার্যক্রমের বর্ণনা দিতে গিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, সিনেটের প্রধান কাজ আইন প্রণয়ন করা, জাতীয় সংসদে উত্থাপিত আইনের পর্যালোচনা, সরকারের কার্যক্রমের উপর নজর রাখা ও বাজেটসহ অন্যান্য নীতির বিষয়ে আলোচনা করা ।
জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী কোন আইন সংসদের নিম্নকক্ষে পাস হলে তার বিরোধিতা করতে পারে সিনেট। যার অনেক উদাহরণ এই ফ্রান্সে আছে বলেও ওই কর্মকর্তা উল্লেখ করেন।
এক বর্ণনায় তিনি বলেন, ফ্রান্সের সিনেটে বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে – আইনজীবী ,বিজ্ঞানী ও গবেষক, ব্যবসায়ী, শিক্ষক ও অধ্যাপক, কৃষি বিশেষজ্ঞ ।
পরিসংখ্যানে দেখা গেছে সিনেটরদের মধ্যে পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবী ৬৫ শতাংশ, অন্যান্য মাঝামাঝি বিভিন্ন পেশার ৫.৫ শতাংশ,শ্রমিক কর্মচারী কর্মকর্তা প্রতিনিধি ২.৬ শতাংশ, অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি ১.২ শতাংশ,অন্যান্য ১৫.৩ শতাংশ, কৃষি প্রতিনিধি ৪.৩ শতাংশ ও বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ৬.১ শতাংশ রয়েছেন।
প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকা ব্যবসায়ী নেতা শাহ আলম জানান, ফ্রান্সের রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সিনেট। দেশটির রাজনৈতিক স্থায়িত্ব কিংবা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এটি। আজ সরাসরি এই তার বিভিন্ন কার্যাবলী সম্পর্কে জানতে পারলাম, কিভাবে তা পরিচালিত হয় ও তার ইতিহাস সম্পর্কেও জানলাম। এই অভিজ্ঞতা অসাধারণ। এ সময় তিনি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান সিনেট পরিদর্শনে আমন্ত্রণ জানানো সিনেটরকে।
এ সময় তিনি বলেন – দেশটির স্থানীয় মেয়র , সংসদ সদস্য,সিনেটর ও বিভিন্ন দলের রাজনীতিবিদদের সাথে ভালো সম্পর্ক ও যোগাযোগ স্থাপন করে ফ্রান্স বাংলাদেশ কমিউনিটির মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করা আমার একটি বড় লক্ষ্য যা অব্যাহত থাকবে।
প্রতিনিধি দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন ফ্রান্স ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালনা পরিষদের সদস্য জুবায়ের আহমেদ, ফাতেমা খাতুন মরিয়ম, ব্যবসায়ী হাবিব আহমেদ বাবু, মাহমুদুল হাসান জয়, নুরুল আমিন, মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, অনিল চৌধুরী, সিনান আলতাই, মশিউর রহমান, সাংবাদিক ইকবাল মোহাম্মদ, মোহাম্মদ লুৎফুর রহমান বাবু প্রমুখ।