নিউজ ডেস্ক: রাজশাহীর পদ্মা নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। শনিবার (৭ মার্চ) বিকেলে আরও দু’জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তারা হলেন- শামীম হোসেন (৩৭) ও তার মেয়ে রোশনি (৭)।
শনিবার সকালে রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে পদ্মা নদীর চারঘাট অংশের ইউসুফপুর থেকে মনি বেগম (৩৫) নামে যেই নারীর মরদেহ প্রথমে উদ্ধার করা হয়েছিল শামীম তার স্বামী। এছাড়া রোশনি তাদের মেয়ে।
শুক্রবার (৬ মার্চ) ঘটনার সময় তাদের ছেলে আলভিকে উদ্ধারকারী ট্রলারে কোনো রকমে তুলে দিয়েছিলেন মা মনি বেগম। কিন্তু নিজে আর উঠতে পারেননি। নিজের প্রাণের বিনিময়ে ছেলের জীবনকে রক্ষা করে গেছেন। আর মেয়ে রোশনিকে বুকে জড়িয়েই পানিতে ডুবে প্রাণ গেছে শামীমের। উদ্ধারকারীরা পানি থেকে ওঠানোর সময় বাবার পরম স্নেহভরা বুকেই জড়ানো অবস্থায় পেয়েছেন মেয়েকে।
শনিবার বিকেলে বাবা-মেয়ের মরদেহ পদ্মাপাড়ে উঠিয়ে আনার পর তাই এক হৃদয়বিদারক পরিবেশের সৃষ্টি হয়। পদ্মাপাড়ে শুরু হয় শোকের মাতম। পরিবারের সদস্যদের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। শামীম-মনি দম্পতি নিখোঁজ কনের চাচা-চাচি। এরমধ্যে দিয়ে বিকেল পর্যন্ত মোট ছয়জনের মরদেহ উদ্ধার করা হলো।
বর্তমানে আরও তিনজন পদ্মায় ডুবে নিখোঁজ রয়েছেন। এরা হলেন- নববধূ সুইটি খাতুন পূর্ণিমা, কনের খালা আঁখি বেগম ও কনের ফুফাতো বোনের মেয়ে রুবাইয়া।
এ দু’জনের আগে আরও একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। দুপুরে উদ্ধার হওয়া যুবকের নাম রতন আলী (২২)। তিনি মহানগরের রাজপাড়া থানার বসুয়া এলাকার গাজী শেখের ছেলে। এছাড়া নিখোঁজ কনের দুলাভাই। শনিবার বিকেলে ৩টার দিকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। একই ঘটনায় শুক্রবার রাতে উদ্ধারের পর তার ছয় বছরের মেয়ে মরিয়ম খাতুনকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এর আগে শনিবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে মহানগরের শ্রীরামপুর ঘাট সংলগ্ন পদ্মা নদী থেকে এখলাস হোসেন (২২) নামে আরও একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি পবা উপজেলার কাঁঠালবাড়িয়া গ্রামের আসলাম হোসেনের ছেলে এবং নৌকাডুবিতে নিখোঁজ কনে সুইটি খাতুন পূর্ণিমার চাচাতো ভাই। এছাড়া এখলাস পেশায় কাঠমিস্ত্রি ছিলেন। এছাড়া আজ ডুবে যাওয়া নৌকাটিও উদ্ধার করা হয়েছে।
দ্বিতীয় দিনের মতো নিখোঁজদের খুঁজতে রাজশাহীর পদ্মা নদীতে শনিবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে আবারও উদ্ধার অভিযান শুরু করে চারটি উদ্ধারকারী ইউনিট। এরমধ্যে রাজশাহী সদর ফয়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের একটি রংপুর থেকে আসা একটি, বিআইডব্লিউটির একটি এবং বিজিবির একটি ইউনিট নদীতে কাজ করছে।
এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘটনার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নিখোঁজদের উদ্ধারে অভিযান চলে। পরে মধ্যরাতে উদ্ধার অভিযান সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়।
রাজশাহীর পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন জানান, শুক্রবার রাতে এ ঘটনায় প্রায় ২৪ জন নিখোঁজ ছিল। তবে রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত বিভিন্নভাবে বেঁচে ফিরেছেন আরও ১৭ জন। এখন সর্বশেষ তিনজন নিখোঁজ রয়েছেন।
রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দফতরের উপ-পরিচালক আবদুর রশীদ জানান, শনিবার সকাল সাড়ে ৭টা থেকে আবারও উদ্ধার অভিযান শুরু হয়েছে। রাজশাহী, রংপুর ও বিআইডব্লিউটির তিনটি ইউনিট এবং বিজিবির একটি ইউনিট যৌথভাবে পদ্মায় উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। সকালে উজানের ৫০০ মিটার গভীরে অনুসন্ধান চালানো হয়। দুপুরে ভাটির ৫০০ মিটারে অনুসন্ধান চলছে।
তিনি আরও বলেন, মানুষ পানিতে ডুবলে সাধারণত ৩৬ ঘণ্টা পর ভেসে উঠতে শুরু করে। এজন্য নৌ পুলিশ, মহানগর পুলিশ, জেলা পুলিশ এবং বিজিবি সদস্যরা রাজশাহীর শ্রীরামপুর এলাকা থেকে শুরু করে পদ্মাপাড় ঘেঁষে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে থাকা চারঘাট উপজেলা পর্যন্ত নিখোঁজদের খোঁজে টহল দিচ্ছেন।
নিখোঁজরা শুক্রবার সন্ধ্যায় বরের বাড়িতে বৌ-ভাতের অনুষ্ঠান শেষে নতুন বউ নিয়ে ফিরছিলেন। ফিরোনি অনুষ্ঠানের জন্য বর-কনেসহ কনে পক্ষের লোকজন নদীর ওপারের চরখিদিরপুর গিয়েছিলেন। সেখান থেকে এপারে থাকা পবা উপজেলার ডাঙেরহাটে ফেরার পথে মহানগরের রাজপাড়া থানার শ্রীরামপুর এলাকার বিপরীতে থাকা মাঝ নদীতে ইঞ্জিন বন্ধ হওয়ার পর এ নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে।