নিউজ ডেস্ক: তৃণমূলকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তারই অংশ হিসেবে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা, জেলা ও মহানগরসহ সকলপর্যায়ে মেয়াদোত্তীর্ণ শাখার সম্মেলন খুব দ্রুত শেষ করতে চায় দলটি। দীর্ঘ দিন ধরে সম্মেলন না হওয়ায় তৃণমূল নেতাকর্মীরা ঝিমিয়ে পড়েছে। তা ছাড়া নতুন নেতৃত্বও তৈরি হচ্ছে না। সম্মেলনের মাধ্যমে পুরাতন জরাজীর্ণ নিষ্ক্রিয় নেতাদের বিদায় দিয়ে তরুণ যোগ্য নেতৃত্ব তুলে আনতে চাইছে ক্ষমতাসীনরা। দলের সভাপতিমণ্ডলী ও সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকেও দ্রুত মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন করার জন্য বিশেষভাবে তাগিদ দেয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার গণভবনে অনুষ্ঠিত সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠকে সংগঠনকে গতিশীল করার জন্য দলীয় প্রধান ৮টি বিভাগে বিভাগীয় কমিটি গঠন করে তৃণমূলকে পুনর্গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। এসব কমিটিতে সিনিয়র নেতাসহ প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদেরও অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশনা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের মোট সাংগঠনিক জেলার সংখ্যা ৭৮। ২০তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর। ওই সময় ৭৮টি জেলার মধ্যে ৫৮টির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ২১তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে গত তিন বছরে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত একটি মাত্র জেলা মৌলভীবাজারের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তাও ২০১৭ সালে। তিন মাস পিছিয়ে গত বছরের ২০ ও ২১ ডিসেম্বর জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের আগমুহূর্তে আরো কয়েকটি জেলার কাউন্সিল করতে সক্ষম হয় দলটি।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, জেলা কমিটির মেয়াদ তিন বছরের। কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদও তিন বছরের। দলের জাতীয় কাউন্সিলের আগে জেলা ও অন্যান্য ইউনিটের কাউন্সিল হওয়ার নিয়ম রয়েছে। আবার জেলার কাউন্সিল করতেও উপজেলা-থানা ও ওয়ার্ডের কাউন্সিল করার নিয়ম রয়েছে। গত ডিসেম্বরে জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও অন্তত পঞ্চাশটি জেলার কাউন্সিল করতে পারেনি দলটি। যদিও জাতীয় সম্মেলনের পরপরই রাজশাহী মহানগরসহ দু’টি জেলার সম্মেলন করতে সক্ষম হয় দলটি। এরপরই বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। ফলে সাংগঠনিক কার্যক্রমও গতিহীন হয়ে পড়ে। এখন বেশির ভাগ জেলা শাখার কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে।
তা ছাড়া অনেক উপজেলা-থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সর্বশেষ কবে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে কিংবা নতুন কমিটি কবে গঠিত হয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কেউ কেউ ভুলতেও বসেছেন। এই দীর্ঘদিন সম্মেলন অনুষ্ঠিত না হওয়ায় নেতাকর্মীরা ঝিমিয়ে পড়েছেন। নতুন নেতৃত্বও উঠে আসছে না। তা ছাড়া কাউন্সিল অনুষ্ঠিত না হওয়ায় অনেক জায়গায় নেতাদের একক আধিপত্য বিস্তারের কারণে অভ্যন্তরীণ কোন্দলও বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দলের সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠকে আওয়ামী লীগ প্রধান ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলাসহ অন্যান্য ইউনিট পুনর্গঠন করে জেলা সম্মেলন করার নির্দেশ দিয়েছেন। ইতঃপূর্বে যেসব উপজেলা, জেলা, মহানগর ও সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন হয়েছে তাদের গত ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে তালিকা জমা দেয়ার কথা থাকলেও অনেকেই জমা দেয়নি। তাদের পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে চূড়ান্ত কমিটি জমা দেয়ার জন্য জোরালোভাবে তাগিদ দেয়া হয়। এর মধ্যে কেউ কেউ জমাও দিয়েছেন। এ ছাড়া ওয়ার্ড-ইউনিয়ন ও থানা-উপজেলাসহ অন্যান্য ইউনিট কাউন্সিলের মাধ্যমে পুনর্গঠনের জন্য জেলায় জেলায় দলীয় প্রধানের বার্তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে বলে দফতর সূত্রে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, সংগঠন দেখভাল করার জন্য বিভাগীয় কমিটিগুলো করা হচ্ছে। যেসব শাখায় এখনো সম্মেলন হয়নি সেখানে সম্মেলন করার ব্যবস্থা করা, অভ্যন্তরীণ কোনো সমস্যা দেখা দিলে সমাধান করাসহ দলকে গতিশীল করার জন্য কাজ করা। অর্থাৎ শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী বিভাগীয় কমিটি দলকে গতিশীল করার জন্য কাজ করবে।