নিউজ ডেস্ক: করোনাভাইরাস যে মারাত্মক আকার ধারণ করবে সে ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে (ডব্লিউএইচও) ডিসেম্বরেই সতর্ক করে দিয়েছিল তাইওয়ান। তবে ডব্লিউএইচও ওই সতর্কতাকে গুরুত্ব দেয়নি বলে অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আর এ কারণেই বিশ্বে মহামারির আকার ধারণ করেছে করোনাভাইরাস। ডব্লিউএইচও-র বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় আক্রমণ করে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, সতর্কতাকে পেছনে রেখে রাজনীতিকে আগে রেখেছিল ডব্লিউএইচও। আর এর মাশুল শুধু টাকা দিয়ে নয় জীবন দিয়েও দিতে হচ্ছে বিশ্ববাসীকে।
ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ছে বলে ই-মেইলের মাধ্যমে ডব্লিউএইচও-কে জানিয়েছিল তাইওয়ান। জানিয়েছিল ভাইরাসটির ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার কথাও। তা সত্ত্বেও সেই তথ্য চেপে গিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের বিবৃতিতে দাবি করেছিল যে, মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে না। আর তাতেই তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
তাইওয়ানের ভাইস প্রেসিডেন্ট চেন চেন জেন নিজেই একজন মহামারি বিশেষজ্ঞ। তিনি একটি সংবাদমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, তাইওয়ানের চিকিৎসকরা জানতে পেরেছিল যে তাদের কিছু বন্ধুবান্ধব অসুস্থ হয়ে পড়ছে চীনের উহানে। এরপরই সে কথা জানানো হয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে। কিন্তু ডব্লিউএইচও তাতে কোনও গুরুত্ব দেয়নি।
এদিকে তাইওয়ান যে সতর্ক ছিল তা সেখানকার সংক্রমনের পরিস্থিতি দেখলেই বোঝা যায়। চীন থেকে এই ভাইরাস ছড়াতে শুরু করলেও পাশে থাকা তাইওয়ানে আক্রান্ত হয়েছে মাত্র ৩৮০ জন, মৃত্যু হয়েছে মাত্র পাঁচজনের।
তাইওয়ান ডিসেম্বরের ইমেলের বিষয়বস্তু প্রকাশিত ব্যক্তি-ব্যক্তি-সিভিড -১৯-এর ছড়িয়ে পড়া ব্যক্তির বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অগ্নিকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে, যে অনুযায়ী এটি সংস্থা কর্তৃক উপেক্ষা করা হয়েছিল এবং কীভাবে লড়াই করতে হবে সে সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য সরবরাহ করতে অস্বীকার করেছে ভাইরাস.
তাইওয়ান ডব্লিউএইচও-র বিরুদ্ধে চীনের মিথ্যা আশ্বাসে বিশ্বাস রেখে ভাইরাসটিকে বিশ্বব্যাপী তীব্রভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ এনেছে তাইওয়ান। সেসময় চীনের উহান থেকে তাইওয়ানের কমপক্ষে সাতজন নাগরিক নিউমোনিয়ার মতো অজানা রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে ডব্লিউএইচও-কে ই-মেইলে জানিয়েছিল। একটি অজানা ভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছে বলে আশঙ্কা করেছিল তাইওয়ান।
মিডিয়ার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাইওয়ানের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলেছে, ‘৩১ শে ডিসেম্বর ডব্লিউএইচও-তে তাইওয়ানের পাঠানো একটি ইমেলের লিখিত তথ্য অনুসারে রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ অনুরোধ জানানো হয়েছিল। তবে সে সময় চীনা কর্তৃপক্ষ সংক্রমণগুলি সার্স বা অজানা কোন ভাইরাসের নয় বলে জানানো হয়েছিল।’
ভাইরাসটি সম্ভাব্য ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ছড়াতে পারে বলে তাইওয়ানের পক্ষে সতর্ক করার যে দাবি করা হচ্ছে সেটা অস্বীকার করেছে ডব্লিউএইচও। তবে তাইওয়ানের সিডিসি বলেছে যে, তারা “অ্যাটিক্যাল নিউমোনিয়া” নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেছে যেটা সার্সকে স্মরণ করিয়ে দেয় যা মানুষ থেকে মানুষে যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়ায়।
সিডিসি জানিয়েছে, তাইওয়ানের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বুঝতে পেরেছিল ভাইরাসটির ভয়াবহতা সম্পর্কে। তবে যেহেতু সে সময়ে তাইওয়ানে এই রোগের কোনও ঘটনা ঘটেনি, তাই আমরা সরাসরি সিদ্ধান্তের কথা বলতে পারিনি যে মানুষের থেকে মানুষে সংক্রমণ হয়েছে।
তাইওয়ান বলেছে যে, ভাইরাসটির সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব থেকে জনগণকে রক্ষা করতে সরকার দ্রুত প্রস্তুত হতে পারে এমন পর্যাপ্ত তথ্য সরবরাহ করতে ডব্লিউএইচও এবং চীনা সিডিসি উভয়ই অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।
ডব্লিউএইচও তাইওয়ানের সতর্কবাণী উপেক্ষা করে চীনের বলা মিথ্যা বিষয়গুলিকে পুনরাবৃত্তি করে চলেছে। তারা এখনও বলে চলেছে ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ভাইরাসটি মানুষ থেকে মানুষে ছড়ানোর কোন প্রমাণ নেই।
তাইওয়ান এবং ডব্লিউএইচও-র মধ্যে উত্তেজনা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সংস্থাটি থেকে মার্কিন অনুদান প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনা করতে বাধ্য করেছে। ইউএস জনগণের দেওয়া করের অর্থ থেকে এই ডলার পরিশোধ করা হয়। ট্রাম্প সোমবার হোয়াইট হাউসের করোনভাইরাস টাস্কফোর্স ব্রিফিংয়ের সময় বলেছিলেন যে তিনি সপ্তাহের শেষের দিকে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর প্রত্যাশা করছেন।
সূত্র- ফক্স নিউজ।