সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল, কানাডা থেকে: ‘আমার পরিবারের কোনো সদস্যই কেউ কানাডিয়ান নয়। কানাডায় এসেছি পরিবারের সাথে দেখা করার জন্য। আমি কূটনৈতিক পাসপোর্টে টুরিস্ট ভিসা নিয়ে এসেছি। এতে অস্বচ্ছতার কিছু নাই।’
২৮ জুন দুপুরে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ মাহবুব উল আলম হানিফ ইত্তেফাকের সাথে দীর্ঘক্ষণ আলাপকালে একথা বলেন।
কোনো কোনো গণমাধ্যম প্রশ্ন তুলেছে, কিভাবে এলেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার বড় ভাই পঞ্চাশ বছর ধরে কানাডায়, এছাড়াও দুই বোনসহ অনেক আত্মীয়স্বজন থাকেন। তারা কানাডিয়ান। আর টরন্টোতে আমার দুই ছেলে ফাহিম ও ফারহান এবং মেয়ে তানিসা ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট হিসেবে পড়াশোনা করে। তাদের দেখতে এসে আমার স্ত্রী ফৌজিয়া আলম কারোনার কারণে আটকা পড়েছেন। তিনি অসুস্থ। থাইরো জনিত সমস্যা। ২৯ জুন তার অপারেশন এর ব্যাপারে সিদ্ধান্তে জানাবেন চিকিৎসক। তাই ১৯ জুন কাতার এয়ারওয়েজে মন্ট্রিয়াল হয়ে টরোন্টো এসেছি।
হানিফ আরো পাল্টা প্রশ্ন করেন, কানাডায় বিদেশি নাগরিকদের আসা নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকলে আমাদের সাথে বাংলাদেশিসহ আরো বিদেশিরা কিভাবে এলেন? আমি প্রথমে মন্ট্রিয়ল হয়ে ডমেস্টিক ফ্লাইডে টরন্টো আসলাম। আমি নীতি বহিঃর্ভূত এলে তো ইমিগ্রশন আমাকেসহ কাউকেই তো ঢুকতেই দিতোনা।
ঢাকার একটি দৈনিক ঈশারা-ইঙ্গিতে উদ্ভট খবর পরিবেশন করে যে বিভ্রান্ত তৈরি করতে চাচ্ছেন, সে ব্যাপারে তারা ঢাকাস্থ কানাডিয়ান দূতাবাস, মন্ট্রিয়ল-টরন্টো ইমিশ্রেন কিংবা কাতার এয়ার লাইন্সের কমার্শিয়াল ফ্লাইটে অনুসন্ধান করে বিস্তারিত জানতে পারেন।
মাহবুব উল আলম হানিফের সাথে কথা বলে আরো জানা গেছে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে ৮ জুন কানাডায় বিদেশি নাগরিকের ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার পর তাঁর ছেলেমেয়েরা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী হিসেবে বাবার সঙ্গে মিলিত হবার জন্য কানাডার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে। সেই আবেদন ও মঞ্জুর হয়। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটও চালু হয়। সে প্রক্ষিতেই তিনি কানাডায় আসেন।
তিনি বলেন, আসলে তারা আমার এবং সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে সব সময় এ ধরণের নেতিবাচক কার্যত্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আমি নিয়মনীতি মেনে দলনেত্রীকে অবগত করে এসেছি। আসার আগে পুরো করোনাকালে আমার নির্বাচনী এলাকা এবং জেলায় যথেষ্ট স্বাস্থ্যসেবার কাজ করে এসেছি। সেখানে ল্যাব স্থাপন করেছি। দফায় দফায় কুষ্টিয়াতে গিয়েছি, পর্যাপ্ত খাদ্য বিতরন করেছি। জেলার প্রশাসন জন প্রতিনিধি, স্বাস্থ্য বিভাগ সবাইকে সমন্বয় করে এসেছি এবং এখান থেকেও নিয়মিত খোঁজ খবর নিচ্ছি। একটু পরই কুষ্টিয়ায় মেডিক্যাল সেন্টারের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেবো।
হানিফ আরো বলেন, ২০১২/১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলে বিএনপি-জামায়াত সারাদেশে আন্দোলনের নামে ব্যাপক সহিংসতা করে । ওই সময় আমি বিএনপি জামাতের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশী কট্টর অবস্থানে ছিলাম। ফলে আমি তাদের টারগেটে পরিণত হয়। তারা সব সময় আমার পেছনে লেগে হুমকি দিয়ে, ভয় দেখিয়ে তাদের বিরুদ্ধাচরণ বন্ধ করার চেষ্টা করেছে । ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে আমার বাসায় একাধিকবার বোমা মেরেছে। এক পর্যায়ে আমার সন্তানদেরকে কিডনাপের হুমকি দেয়। তাদের নিরাপত্তার কারণে আমার ভাইবোনদের পরামর্শে বাচ্চাদের এখানে পড়ার সিদ্ধান্ত নেই।
নন কানাডিয়ানেরা কি কানাডায় চিকিৎসা করাতে পারে? এই প্রশ্নের জবাব্ কেনো পারবেনা। সব দেশেই ভিসা নেয়ার আগে হেলথ ইন্স্যুরেস নিতে হয়। যা, ভিজিটরেরা অসুস্থ হলে সেই খাত থেকে চিকিৎসা করা হয়।
তিনি বলেন, ‘বেগম পাড়া’ শব্দটি অত্যন্ত নেতিবাচক এবং অপ্রাসঙ্গিক ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ, ২০০৬ সালে বিএনপি সমর্থিত অনেক ব্যবসায়ী এখানে বাড়ি কিনে বসবাস শুরু করার পর বেগম পাড়া হিসাবে কথার প্রচলন হয়। কিন্তু আমি দৃঢ়তার সাথে জানাচ্ছি, কানাডায় আমাদের কোনো বাড়িঘর নেই। তা যাছাই করার জন্য বেশি দূর যাবার দরকার নেই; যে কোনো সংশিষ্ট অথোরিটির মাধ্যমে খোঁজ নিতে পারেন।
কবে দেশে ফিরবেন? এই প্রশ্নের জবাবে হানিফ বলেন, এখনো তো কোয়ারেন্টিনে আছি। এর মধ্যে আমার স্ত্রীর চিকিৎসা চলছে। জুলাই মাসের মাঝামাঝিতে ফেরার সম্ভাবনা বেশি।
খবর: ইত্তেফাক