নিউজ ডেস্ক: করোনাভাইরাসের ভয়ে আতঙ্কিত পুরো বিশ্ব। নানান ধরনের চিন্তা-ভাবনা আর কৌতুহলে অনেকেরই মনে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন আসে। কারো হয়তো জানতে ইচ্ছা করে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের অনুভূতি কেমন হয়? আর এসব প্রশ্নের উত্তর নিয়েই আজকের প্রতিবেদন।
প্রতিবেদনে করোনা আক্রান্ত এক রোগীর অনুভূতি তুলে ধরা হয়েছে। যিনি চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরের বাসিন্দা।
দ্যা গার্ডিয়ানের কাছে টাইগার ইয়ে নামের ওই ব্যক্তি তার দুর্বিষহ জীবনের ঘটনা তুলে ধরে জানান, জানুয়ারি ১৭ তারিখে তার সর্দি হয়। এরপর থেকে সে সর্দির ওষুধ নেয়া শুরু করেন। তবে চারদিন পরেও সর্দি না কমায় টাইগারকে উহানের টংজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
টাইগার ইয়ে বলেন, হাসপাতালে পৌঁছে আমি শুধু রোগী আর রোগী দেখতে পাই। এর আগে আমি সার্সের ওপর অনেক ডকুমেন্টারিতে এমন দৃশ্য দেখেছি। এরপর ওই হাসপাতালে কোন অবস্থার পরিবর্তন না দেখে টাইগার ইয়ের বাবা-মা তাকে আরেকটি হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানেই তার করোনা ভাইরাস রোগটি ধরা পড়ে।
এরপর ডাক্তাররা টাইগার ইয়েকে বাড়িতে আলাদা হয়ে থাকতে বলেন। টাইগার ইয়ে জানান, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর জানুয়ারির ২১ থেকে ২৬ তারিখ পর্যন্ত তার সবচেয়ে খারাপ সময় ছিল।
ওই সময়ের কথা জানাতে গিয়ে টাইগার ইয়ে বলেন, আমার খুব কাশি ছিল এবং এর কারণে আমার পাকস্থলি এবং পিঠ ব্যাথা হয়ে যায়। আমি ভেবেছিলাম আমাকে হয়তো চিরদিনের জন্য সবাইকে বিদায় বলে যেতে হবে।
টাইগার ইয়ে জানায়, জানুয়ারির ২৯ তারিখে তার ভাই এবং দাদীও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন। ওইদিনই ডাক্তাররা এইডসের প্রতিষেধক দিয়ে টাইগার ইয়ে’র চিকিৎসা শুরু করেন। আর এই চিকিৎসা শুরু হওয়ার পর ফেব্রুয়ারির ৪ তারিখ টাইগার ইয়ের অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়। এর তিনদিন পর ডাক্তাররা ঘোষণা করেন যে তিনি করোনা ভাইরাস মুক্ত।
প্রসঙ্গত, চীনে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯৭৯ জনে। এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৮৬ হাজার ৫২৯ জন, সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৪১ হাজার ৯৫৮ জন।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এখন পর্যন্ত চীনের মূল ভূখণ্ডে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৭৯ হাজার ৮২৪ জন। এর মধ্যে মারা গেছে ২ হাজার ৮৭০ জন। এ ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় ৩ হাজার ১৫০ আক্রান্ত হয়েছে, মারা গেছে ১৭ জন।
ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ইতালিতে ১ হাজার ১২৮ জন আক্রান্ত, মারা গেছে ২৯ জন। জাপানের প্রিন্সেসে ৭০৫ জন আক্রান্ত, মৃত্যু ৬ জনের। ইরানে আক্রান্ত ৫৯৩, মৃত্যু ৪৩ জন। জাপানে আক্রান্ত ২৪২, মৃত্যু ৫। সিঙ্গাপুরে আক্রান্ত হয়েছে ১০২। ফ্রান্সে ১০০ জন আক্রান্ত, মৃত্যু ২ জন। হংকংয়ে আক্রান্ত ৯৫, মৃত্যু ২।
করোনায় যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত হয়েছে ৬২ জন, মৃত্যু ১ জন। যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত ২৩, মৃত্যু ১। তাইওয়ানে ৩৯ জন আক্রান্ত, মৃত্যু ১। এ ছাড়া জার্মানিতে ৫৭, স্পেনে ৪৬, কুয়েতে ৪৫, থাইল্যান্ডে ৪২, বাহরাইনে ৩৮, মালয়েশিয়ায় ২৫ ও অস্ট্রেলিয়ায় ২৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন।
এ ছাড়া আরব আমিরাতে ১৯, ভিয়েতনামে ১৬, কানাডায় ১৪, ইরাকে ১৩, সুইডেনে ১৩, ম্যাকাউতে ১০, সুইজারল্যান্ডে ১০, লেবাননে ৭, নেদারল্যান্ডসে ৬, নরওয়েতে ৬, ওমানে ৬, ক্রোয়েশিয়ায় ৬, অস্ট্রিয়ায় ৫, ইসরায়েলে ৫, রাশিয়ায় ৫, পাকিস্তানে ৪, গ্রিসে ৪, মেক্সিকোতে ৪, ফিলিপাইনে ৩, ফিনল্যান্ডে ৩, ভারতে ৩, রোমানিয়ায় ৩, ডেনমার্কে ২, জর্জিয়ায় ২, ইকুয়েডরে ১ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছে।
এর বাইরে করোনাভাইরাসে আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, আজারবাইজান, বেলারুস, বেলজিয়াম, ব্রাজিল, কম্বোডিয়া, মিশর, এস্তোনিয়া, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, লিথুনিয়া, মোনাকোত, নেপাল, নিউজিল্যান্ড, উত্তর মেসিডোনিয়া, নাইজেরিয়া, কাতার ও শ্রীলঙ্কায় একজন করে আক্রান্ত হয়েছে।
গোটা বিশ্বকে কাঁপিয়ে তোলা এ ভাইরাসটি গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথমবারের মতো ধরা পড়ে। মরণঘাতী এ ভাইরাসের প্রভাব পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতিতে। বেশ কিছু দেশের সঙ্গে আকাশ পথে যোগাযোগ বন্ধ আছে। এমনকি সৌদি কর্তৃপক্ষ ওমরাহ হজ ও দেশটিতে পর্যটন ভিসা স্থগিত করেছে।