নিউজ ডেস্ক: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবার ইতালিতে অবৈধ হয়ে পড়া প্রায় লাখ ছয়েক অভিবাসীর জন্য সুখবর আনতে যাচ্ছে। কোভিড-১৯ মোকাবিলা করতে গিয়ে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি কৃষি খাতে উৎপাদন ধরে রেখে খাদ্যসংকট যাতে না হয়, সে জন্য দেশের রাজনীতিবিদেরা অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা দিতে যাচ্ছেন। মূলত, কৃষি খাতে শ্রমিকের সংকট হওয়ায় ইতালি সরকার কয়েক সপ্তাহ ধরে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
কয়েক দিন ধরে ইতালির প্রখ্যাত লা রিপাবলিকাসহ বেশ কয়েকটি দৈনিক এ নিয়ে প্রতিবেদন ও সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে।
মিলান থেকে প্রকাশিত কোরিয়েরে দেলা সেরা ও ইল জিওনার্ল পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত ইতালি সরকার অবৈধ অভিবাসীদের এক বছরের জন্য বৈধতা দিলে দুই থেকে ছয় লাখ পর্যন্ত বিদেশি কর্মী ইতালিতে এ সুবিধা পাবেন। এ মুহুর্তে ইতালিতে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের কর্মীরাই শুধু এ সুযোগ পাবেন।
ইতালিতে বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, দেশটিতে এ মুহূর্তে প্রায় ৫০ হাজারের মতো বাংলাদেশি কর্মী অনিয়মিত হয়ে পড়েছেন। শেষ পর্যন্ত অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা দেওয়া হলে বাংলাদেশের কর্মীদের বড় অংশই এ সুবিধা পেতে যাচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার ইতালির পার্লামেন্টে এক আলোচনায় কৃষিমন্ত্রী তেরেসা বেল্লানোভা বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে ইতালির কৃষি খাতে ব্যাপক ধস নেমে এসেছে। এ অবস্থায় দেশটির কৃষি খাতকে উন্নত করার জন্য অনেক জনশক্তি প্রয়োজন। এ ছাড়া কোভিড-১৯–এর কারণে এ মুহুর্তে অন্য দেশ থেকে জনশক্তি আমদানি করা সম্ভব না। এই পরিস্থিতিতে কৃষি খাতে কর্মী নিয়োগ না হলে ভবিষ্যতে খাবারের সংকটে পড়তে পারে ইতালি। তাই অনিয়মিত হয়ে পড়া অভিবাসীদের বৈধতার সুযোগ দিয়ে বিভিন্ন খাতে কাজ করার সুযোগ দেয়া উচিত।
তেরেসা বেল্লানোভা পার্লামেন্টে জানান, এ মুহুর্তে ইতালিতে লাখ ছয়েকের মতো অবৈধ অভিবাসী রয়েছেন, যাঁরা কম বেতনে কাজ করেন এবং প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হচ্ছেন।
ইল জিওনার্ল পত্রিকার গত শনিবারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা দেওয়ার বিষয়ে একটি খসড়া আইন তৈরি করা হচ্ছে। এরই মধ্যে ওই খসড়া সম্পর্কে খসড়াটি কৃষি, শ্রম, স্বরাষ্ট্র অর্থ ও আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়েছে। নতুন চুক্তি অনুযায়ী এসব বিদেশি কর্মীকে নিয়োগ দেওয়া যাবে এক বছরের চুক্তিতে।
কোরিয়েরে দেলা সেরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূলত, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে থেকে ইতালিতে আসা মৌসুমি শ্রমিকেরা কোভিড-১৯–এর বিস্তারের কারণে চলে গেছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে কৃষিকাজের জন্য সবচেয়ে ফলপ্রসু ভূমিকা রাখতে পারেন ইতালিতে অবস্থানরত অনিয়মিত বিদেশি কর্মীরা। তাঁদের কৃষি, পশুপালন মাছ ধরাসহ ব্যাপক অর্থে কৃষি অর্থনীতির কাজে বৈধতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
ইতালির বর্তমান ক্ষমতাসীন জোট সরকারের শরিক দল ডেমোক্রেটিক পার্টির অন্যতম প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো মিন্নিতি লা রিপাবলিকা পত্রিকায় দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, করোনাভাইরাসের মতো অদৃশ্য জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত একটি দেশে নিয়ন্ত্রণহীন এমন কোনো জনগোষ্ঠী থাকতে পারে না কিংবা থাকা উচিত না, যাদের কোনো বৈধ পরিচয় নেই। অমানবিক ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এবং অবৈধভাবে তাঁদের বসবাস অব্যাহত থাকলে মহামারির প্রকোপ আরও বাড়বে।
মার্কো মিন্নিতি বলেন, ‘অবৈধ অভিবাসীদের বৈধ হওয়ার সুযোগ দিয়ে আমরা তাঁদের উপকার করব না, বরং দেশের আপামর জনগণের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে চাই আমরা।’ লা রিপাবলিকা পত্রিকার নিজস্ব ভাষ্যমতে, মার্কো মিন্নিতির এই বক্তব্য খুবই যৌক্তিক বর্তমান প্রেক্ষাপটে এবং এতে ইতালিতে অবৈধ অভিবাসীদের ঢালাওভাবে বৈধতার পথ প্রশস্ত হতে চলেছে। এর মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে ইতালি যেমন লাভবান হবে, তেমনি দেশজুড়ে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি কৃষিজমিতে জনবল জোরদার হবে।
অবৈধ অভিবাসীদের ইতালিতে বৈধতার বিষয়ে জানতে চাইলে রোমে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান শিকদার সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে এ বিষয়টি নিয়ে ইতালি সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। পার্লামেন্টেও এ নিয়ে গত সপ্তাহে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। পার্লামেন্টে আলোচনা শেষে একটি আইন হবে বলে শুনেছি। শেষ পর্যন্ত এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলে বাংলাদেশের অনিয়মিত হয়ে পড়া কর্মীরাও এর সুফল পাবেন।