নিুউজ ডেস্ক: দাফনের অপেক্ষায় গির্জায় সারিবদ্ধভাবে লাশগুলো পড়ে আছে। বাড়িতে কেউ মরলে লাশ ঘরের মধ্যেই আবদ্ধ রাখতে হচ্ছে। মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানেও সংকটে পড়তে হচ্ছে।
বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসে ইতালিতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত বেরগামো শহরে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দেশটিতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা তিন হাজার ৪০৫ জন। তাদের ভস্মীভূত ও দাফন অনেকটা আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই হচ্ছে। খবর গার্ডিয়ানের।
লম্বারডি অঞ্চলের বেরগামোতে ১২ লাখের মতো মানুষের বাস। সেখানে বুধবার পর্যন্ত এক হাজার ৯৫৯ জন মারা গেছেন। আক্রান্ত চার হাজার ৩০৫ জন। কিন্তু প্রদেশটিতে কী সংখ্যক লোক মারা গেছেন, তা এখনো পরিষ্কার হওয়া সম্ভব হয়নি।
কিন্তু বুধবারে পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছিল। সেদিন রাতে বেরগামোর সমাধিক্ষেত্র থেকে ৬৫টি কফিন নিয়ে মোডেনা ও বোলোগনাতে নিয়ে যায় সেনাবাহিনী।
দাফনের জন্য কফিনগুলো এক অঞ্চল থেকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আরেক অঞ্চলে। প্রতিদিন ট্রাক ট্রাক লাশ সরাতে হচ্ছে।
পহেলা মার্চ থেকে ৬০০ মরদেহ দাফন ও দাহ করেছে অঞ্চলটির সবচেয়ে বড় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পরিচালক কোম্পানি সিএফবি।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অন্তোনিও রিকিয়ারডি বলেন, সাধারণত মাসে আমরা ১২০টি মরদেহ দাফন করি। কিন্তু গত দুই সপ্তাহে একটি প্রজন্মের মৃত্যু হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা কোনোদিনই এমন পরিস্থিতি দেখেনি। কান্না ছাড়া আমাদের কিছুই আসছে না।
অঞ্চলটিতে ৮০টির মতো অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া কোম্পানি রয়েছে। প্রতি ঘণ্টায় তারা কয়েক ডজন ফোন পায়। কিন্তু কফিনের স্বল্পতায় প্রয়োজন মেটানো তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। আর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া কর্মীরাও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন।
মরদেহ সামলানোর ক্ষেত্রে হাসপাতালগুলো কঠিন নীতি অবলম্বন করছে। লাশগুলো থেকে যাতে করোনা ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্য সেগুলো সরাসরি কফিনে করেই নিতে হচ্ছে।
রিকিয়ারডি বলেন, পরিবার সদস্যরা তাদের প্রিয়জনদের দেখার কিংবা ভালোভাবে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সুযোগও পাচ্ছেন না। মানসিকভাবে এটা একটি বড় সমস্যা।
তিনি আরও জানান, আমাদের বহু কর্মী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কাজেই বহু লোককে পরিবহন ও তাদের মরদেহ প্রস্তুত করার সক্ষমতাও আমাদের নেই।
আর যারা বাড়িতে মারা যাচ্ছেন, তাদের পরিবারকে আরও খারাপ অবস্থায় পড়তে হচ্ছে। প্রথমত, লাশ দাফন-দাহ করার আগে দুজন চিকিৎসকের কাছ থেকে মৃত্যুসনদ নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, কেউ মারা যাওয়ার পর ৩০ ঘণ্টা না যেতেই একজন বিশেষজ্ঞকে সত্যায়িত করতে হবে।
কাজেই পরিবারগুলোকে দুজন চিকিৎসক আসার অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। এসময় তাদের অনেকেও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।