নিউজ ডেস্ক: হাজার বছরের ঐতিহ্য ইতিহাস এবং নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের লীলাভূমি ইউরোপ। বলতে গেলে প্রতিটি দেশই এমনভাবে সাজানো গোছানো যেন শিল্পীর তুলিতে রূপ দান করা হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারী গত মার্চ থেকে ব্যাপকভাবে হানা দিয়েছিল এবং বিভিন্ন ধরনের আশঙ্কা শঙ্কার মধ্য দিয়ে অন্তর্দেশীয় ভাতৃত্বের বিভাজনের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। এর প্রভাব আমরা দেখেছি গত ইইউ শীর্ষ সম্মেলনে। তবে মে মাসের শেষ দিকে সব কিছুই স্বাভাবিক হয়ে আসছিল আন্তঃইউরোপীয় ভ্রমণের ক্ষেত্রে কোনো বাধা-নিষেধ ছিল না, মানুষের জীবনযাত্রা অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছিল।
করোনা মহামারীর দৌরাত্ম্য শিথিল হয়ে আসা ইউরোপের জীবনধারায় স্বল্প সময়ে স্থায়ী হল না। আবারো সেই করোনার থাবায় ইউরোপে দ্বিতীয়বারের মতো আক্রান্ত। প্রথম পর্যায়ে ইতালি জার্মানি খুব খারাপ সময় পার করলেও এই দ্বিতীয় ধাপে আঘাত সইতে হচ্ছে স্পেন এবং ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ইউক্রেন। তারপরেই আছে জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ড, চেক রিপাবলিক, রোমানিয়া একে একে আরও অনেক দেশ।
স্পেনে গত বৃহস্পতিবার ১১ হাজার ২৯১ জন নতুন আক্রান্ত হয়েছে এবং ১৬২ জন মৃত্যুবরণ করেছে। গত ১৪ দিনে এ পর্যন্ত স্পেনে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ৩৭ হাজার ১৩৮ জন। স্পেনের সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬ লাখ ২৫ হাজার ৬৫১ জন এবং মৃত্যুর সংখ্যা ৩০ হাজার ৪০৫ জন। তবে দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে যে গত ১৪ দিনে স্পেনে প্রতি ১ লাখ জনসংখ্যা অনুপাতে ২.৫ জন মৃত্যুর হার এবং ২৯২.২ নতুন আক্রান্ত রেকর্ড করা হয়েছে।
ফ্রান্সে আশঙ্কাজনকভাবে গত বৃহস্পতিবার ১০ হাজার ৫৯৩ জন নতুন আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে এবং গত দুই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ১৪ দিনে ১ লাখ ১৫ হাজার ৩০০ জন নতুন আক্রান্ত হয়েছে। গত ১৪ দিনে প্রতি এক লাখ লোকের মধ্যে ১৭২ জন লোক আক্রান্ত হয়েছে। তবে মৃত্যুর হার শূন্য দশমিক ৬ জন যা স্পেনের তুলনায় অনেক কম। তবে গত কিছুদিনের নতুন আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার কারণে ফ্রান্স সর্বমোট আক্রান্ত সংখ্যা চার লাখ ১৫ হাজার ৪৮১ জন ইইউ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মোট আক্রান্তের দিক থেকে।
যুক্তরাজ্যে প্রতিদিন গড়ে চার হাজার জনের বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। গত শুক্রবার ৪,৩২২ জন নতুন আক্রান্ত এবং ২৭ জন মৃত্যুর রেকর্ড করা হয়েছে। ইইউ দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যে গত ১৪ দিনে তৃতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্ত সংখ্যা ৪১ হাজার ২০৩ জন। তবে মৃত্যুর হার খুবই কম। যুক্তরাজ্যে গত ২২ আগস্টের পর থেকে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা পূর্বের দিনগুলো থেকে বর্তমানে প্রতিদিনের মতো দ্বিগুণ হারে রূপ নিচ্ছে।
ফ্রুগাল ফোর খ্যাত নেতৃত্বের দেশ নেদারল্যান্ডের পরিস্থিতিও পূর্বের তুলনায় খুব একটা ভালো নয়। গত ১৪ দিনে ১৫ হাজার ৫৯৫ জন নতুন আক্রান্ত হয়েছে এবং গত ১৪ দিনে ১ লাখ লোকের মধ্যে ৯০ জন নতুন আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। তবে মৃত্যুর হার খুবই সামান্য ০.২ জন।
তাছাড়া ইতালিতে গত ১৪ দিনে ২০ হাজার ১৩৩ জন, জার্মানিতে ২০ হাজার ১৫৪ জন, চেক রিপাবলিক ১৭ হাজার ৭০৩ জন, রোমানিয়া ১৭ হাজার ৪৩৪ জন, বেলজিয়ামে ১০ হাজার ২৭ জন, হাঙ্গেরিতে ৯ হাজার ১৮৮ জন, পোল্যান্ডের ৭ হাজার ৪৪২ জন এবং পর্তুগালে ৭ হাজার ৩৪৫ জন আক্রান্ত শনাক্ত করা হয়েছে। তবে এই দেশগুলোর মধ্যে নতুন আক্রান্তের সংখ্যায় সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে চেক রিপাবলিক গত ১৪ দিনে প্রতি ১ লাখ লোকের অনুপাতে ১৬৬ জনকে নতুন আক্রান্ত সনাক্ত করা হয়েছে এবং মৃত্যুর অনুপাতের দিক থেকে রোমানিয়া ২.৮ জন রেকর্ড করা হয়েছে।
ইউরোপ প্রতিটি দেশেই তাদের বড় শহরগুলোতে প্রাথমিকভাবে কিছু কঠোর স্বাস্থ্যবিধি আরোপ করা হয়েছে এবং নতুনভাবে আরও কী পন্থা অবলম্বন করলে সংক্রমণ কিছুটা হলেও রোধ করা যাবে তার প্রস্তুতি চলছে এবং খুব শিগগিরই জীবনযাত্রায় কঠোর বিধি নিষেধ আসছে।
উল্লেখ্য যে শীতপ্রধান অঞ্চল হিসেবে ইউরোপে এমনিতেই শীত মৌসুমে ঠাণ্ডা জনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায় এবং সারা বছরের তুলনায় শীতকালে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি হয়। অপরদিকে কোভিড-১৯ ভাইরাসটি ঠাণ্ডাজনিত ফ্লুর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় আগত শীত মৌসুমে সাধারণ চিরাচরিত ফ্লু এবং করোনা মিলে এক কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায় করোনার উৎপত্তিস্থল চীনের উহানে শীত মৌসুমে ব্যাপকতা ছড়িয়েছিল। তবে যদিও ভাইরাস সম্পর্কে অনভিজ্ঞতা একটা কারণ ছিল।
যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়ন করোনা মোকাবেলায় বিভিন্ন যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রতিষেধক এবং প্রতিরোধকের আবিষ্কার না হওয়ার কারণে নিশ্চিতভাবে মহামারী থেকে বেঁচে থাকার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না এবং দুঃখজনক হলেও সত্য যে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন শীতের মাঝামাঝি এবং বা শেষদিক তৃতীয়বারের মতো মহামারীর ব্যাপকভাবে হানা দেওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।