1. ph.jayed@gmail.com : akothadesk42 :
  2. admin@amaderkatha24.com : kamader42 :
সোমবার, ০২ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:৫৬ অপরাহ্ন

অবৈধ ইউরোপযাত্রায় শীর্ষে বাংলাদেশ

আমাদের কথা ডেস্ক
  • আপডেট : শুক্রবার, ৩০ জুলাই, ২০২১

নিউজ ডেস্ক: ২০১৪ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের ২২ লাখ ২৪ হাজার ২৪৫ জন ঝুঁকিপূর্ণভাবে সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছে। একই সময়কালে এভাবে অনুপ্রবেশ করতে গিয়ে প্রাণ হারাতে হয়েছে ২১ হাজার ৭০৭ জনকে। ইউএনএইচসিআর এ তথ্য জানিয়ে আরও বলেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত যত লোক অবৈধ পথে ইউরোপে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছে, তার সাড়ে ১৪ শতাংশই বাংলাদেশি; শতকরার হিসাবে এটিই সর্বোচ্চ সংখ্যা। বাংলাদেশের পর এ তালিকায় রয়েছে সিরিয়া, আফগানিস্তান, সুদান ও ইরিত্রিয়ার নাম। গত এক দশকে ৬২ হাজার বাংলাদেশি অবৈধ পথে ইউরোপে গেছে।

অন্যদিকে প্রতিবেশী ভারতে দেশের অনেক নারী ও কিশোরীই পাচার হয়ে যাচ্ছে হরহামেশা। সম্প্রতি এটি উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। নারী ও শিশু পাচার হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যসহ অন্যান্য দেশেও। অন্যদিকে রোহিঙ্গারাও পাচার হয়ে যাচ্ছে।

সাম্প্রতিককালে অবৈধ মানবপাচারে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ব্যবহার বেড়েছে। ২০১২ থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ৫ হাজার ৭৩৮টি মামলা হলেও নিষ্পত্তি হয়েছে সাকুল্যে ২৮২টি; সাজা হয়েছে ৭১ জনের। এমন বাস্তবতায় আজ দেশে পালিত হবে আন্তর্জাতিক মানবপাচারবিরোধী দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য- ‘ভুক্তভোগীদের কণ্ঠস্বর পথ দেখায়’।

ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়া বাংলাদেশিদের মধ্যে তরুণই বেশি। ২১ জুন এভাবে লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে নৌকাডুবিতে ১৭ বাংলাদেশি প্রাণ হারায়। তিউনিসিয়ার কোস্টগার্ড ভূমধ্যসাগর থেকে বাংলাদেশিসহ ৩৮০ জনকে জীবিত উদ্ধার করে। গত ২৪ জুন ২৬৭ জনকে উদ্ধার করে তিউনিসিয়ার কোস্টগার্ড, যার মধ্যে ২৬৪ জনই বাংলাদেশি। ১০ জুন ১৬৪ বাংলাদেশিকে তিউনিসিয়া উপকূল থেকে উদ্ধার করে দেশটির কোস্টগার্ড। এর আগে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার সময় গত ১৮ মে ৩৬ জন, ২৭ ও ২৮ মে ২৪৩ বাংলাদেশিকে উদ্ধার করে তিউনিসিয়ার কোস্টগার্ড। এ বছর এভাবে মোট ৩ হাজার ৩৩২ জন বাংলাদেশিকে উদ্ধার বা আটক করা হয়েছে।

ইউরোপের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা ফ্রন্টেক্সের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে এভাবে ৬০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি ইউরোপে প্রবেশ করেছে। গত কয়েক বছরে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, ঢাকা, নোয়াখালী, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা এসব জেলা থেকে সবচেয়ে বেশি লোক অবৈধভাবে সাগরপথে ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করেছে।

বাংলাদেশের তিন দিকে ভারত সীমান্ত হওয়ায় নারী ও শিশু পাচারের ঘটনা ঘটছে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথের গবেষণায় দেখা গেছে, পাচারকারীরা সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে সংকটে থাকা পরিবারের শিশু-কিশোরীদের পাচারের জন্য টার্গেট করছে। গবেষণায় দেখা গেছে, গত কয়েক বছরে পাচারের ক্ষেত্রে ফেসবুক, টিকটকসহ সামাজিক যোগাযোগের নানা মাধ্যম অনেক বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। নারী পাচারের বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে গত মাসের শেষ দিকে ভারতে বাংলাদেশি এক তরুণীকে পৈশাচিক নির্যাতনের একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর। এ ঘটনায় ভারতের পুলিশ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে, যাদের মধ্যে পাঁচজনই বাংলাদেশি। এমনকি এ পাঁচজনের মধ্যে এক নারীও আছে। এদিকে ঘটনার পর পুলিশ ও র‌্যাব নারী পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে দুটি চক্রের ১২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। শুধু এই দুই চক্র পাঁচ বছরে প্রায় দুই হাজার নারীকে ভারতে পাচার করেছে বলে পুলিশ ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে তথ্য দেওয়া হয়েছে। তবে বাংলাদেশ থেকে কী পরিমাণ নারী ও শিশু ভারতে পাচার হয় তার কোনো সঠিক তথ্য নেই। অন্যদিকে ভারতে পাচার হওয়া প্রায় দুই হাজার নারীকে গত ১০ বছরে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ থেকে ২০২০ পর্যন্ত মানবপাচারের যেসব মামলা হয়েছে তাতে দেখা গেছে, প্রায় দুই হাজার নারী মানবপাচারের শিকার হয়েছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী শুধু ২০২০ সালে অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমকালে উদ্ধারকৃত নারীর সংখ্যা ৩০৩। শুধু ভারত নয়, মধ্যপ্রাচ্যসহ সবখানে নারী পাচার হচ্ছে। দুবাইতে বিভিন্ন ডান্স ক্লাবে কাজের কথা বলে নারী পাচারের ঘটনা ওপেন সিক্রেট। অন্যদিকে করোনাকালীন তুরস্ক থেকে দেশে ফিরেছে ১ হাজার ২৯ নারী।

বাংলাদেশ থেকে সাগরপথে রোহিঙ্গাদের পাচারও থেমে নেই। ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-এর জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত এক বছরে ১ হাজার ৫৯৭ জন রোহিঙ্গা পাচার হয়। ২০২০ সালে অন্তত ২ হাজার ৪০০ রোহিঙ্গা সাগরপথে পাড়ি দিয়েছে।

২০১২ সালে মানবপাচার প্রতিরোধে সরকার মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন করে। ব্র্যাক মাইগ্রেশনের তথ্য অনুযায়ী, মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে ২০১২ থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত ৫ হাজার ৭৩৮টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় দেখা গেছে, ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ পাচারের শিকার। এতে মোট আসামির সংখ্যা সাড়ে ২৪ হাজারেরও বেশি। কিন্তু ৫ হাজার ৭৩৮টি মামলার মধ্যে গত নয় বছরে ২৮২টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৩৬টি মামলায় মাত্র ৭১ জনের সাজা হয়েছে। বাকিরা অব্যাহিত পেয়ে গেছে। বাকি প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মামলা এখনো চলমান।

এদিকে আন্তর্জাতিক মানবপাচারবিরোধী দিবস উপলক্ষে গতকাল ব্র্যাক মাইগ্রেশন মানবপাচার ও অনিয়মিত অভিবাসন : পরিস্থিতি বিশ্লেষণ, চ্যালেঞ্জ ও ও করণীয় শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে বক্তারা মানবপাচারকে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করে পাচারকারীদের প্রতিহতের কথা বলেন। অনুষ্ঠানে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক সচিব নাছিমা বেগম বলেন, মানবপাচার জঘন্যতম অপরাধ। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এ বিষয়ে সজাগ। দায়িত্বরত সবাইকে এ বিষয়ে আরও সতর্ক হতে হবে। পাচারকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। তাদের প্রতিহত করতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে কিশোরী পাচারের ঘটনা উল্লেখ করে নাছিমা বেগম বলেন, কী করে তারা ভারতীয় নানা ধরনের পরিচয় কার্ড পেয়ে যাচ্ছে? ভ্রমণ ভিসায় কী করে এত লোক চলে যাচ্ছে সেটি দেখতে হবে। এত এত পাচারকারী কিন্তু মানবপাচার আইনে নয় বছরে ৩৬টি মামলায় মাত্র ৭১ জনের সাজা হলো কেন? অপরাধীদের বিচার করতে হবে। মামলার বিচার বাড়াতে হবে।

অনুষ্ঠানে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. শহীদুল আলম বলেন, জেনে-বুঝে দক্ষ হয়ে বিদেশে যেতে হবে। প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। একইভাবে যারা দায়িত্ব পালন করেন সেই সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ সবার মানবপাচার ও অভিবাসন আইনের বিষয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণ দরকার। ব্র্যাক, বিএমইটি, সরকারি-বেসরকারি সংস্থা সবাই মিলে কাজ করলে আমরা সমাজে পরিবর্তন করতে পারব।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জিএসএম জাফরউল্লাহ পাচাররোধে সরকারের নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে বলেন, সরকারি-বেসরকারি সংস্থা সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেন আরও তৎপর হয় সে ব্যাপারে আমরা নজর রাখব। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) মানবপাচারবিষয়ক সেলের বিশেষ পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান বলেন, দেশের ভেতরকার পাচারের মামলাগুলো তদন্ত করা সহজ, কারণ সব তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু বিদেশে পাচারের ঘটনায় অধিকাংশ সময় ভুক্তভোগীরা যথেষ্ট তথ্য দিতে চান না। আবার অনেক মামলার বাদী বা ভুক্তভোগীকেই পাওয়া যায় না। ভূমধ্যসাগর দিয়ে যারা মানবপাচারের শিকার, তারা কোনো অভিযোগ করে না। তবে পুলিশ দেশে-বিদেশে পাচারকারীদের নেটওয়ার্ক খুঁজছে। পাচারকারীরা পার পাবে না। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন পরিচালক কেএএম মোর্শেদ। তিনি বলেন, কোভিড-পরবর্তী সময়ে মানবপাচারের ঝুঁকি বেড়েছে। আমরা চাই লোকজন বিদেশে যাবে। কিন্তু বৈধভাবে। সবার সম্মিলিত উদ্যোগেই সেটি সম্ভব। অনুষ্ঠানে মানবপাচার ও অনিয়মিত অভিবাসনবিষয়ক পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে মাইগ্রেশন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান বলেন, মানবপাচার প্রতিরোধে আমাদের মানুষকে যেমন সচেতন হতে হবে, তেমনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। মামলাগুলোর বিচার হতে হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এই জাতীয় আরো খবর
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Maintained By Macrosys